থাইল্যান্ড
থাইল্যান্ড দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার একটি জনপ্রিয় ট্রাভেল ডেস্টিনেশন। স্বল্প খরচে ঘুরাঘুরি করার জন্য যে কয়টি দেশ ট্রাভেলারদের পছন্দ তারমধ্যে থাইল্যান্ড এর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তাই এই ভ্রমনের স্বর্গরাজ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রাভেলাররা ছুটে আসেন। ক্রিস্টাল ক্লিয়ার সমুদ্রের জল, পর্যটন বান্ধব পরিবেশ, মজার মজার খাবার, সারা রাত পার্টি ইত্যাদি কারনই যথেষ্ঠ একটি দেশ ভ্রমনের। তাছাড়া আরো অনেক কারনেই নামডাক আছে থাইল্যান্ডের। এশিয়ার লোকজন যতটা না সেখানে যায় তার থেকে বেশি যায় ইউরোপ আমেরিকার লোকেরা। সবারই লক্ষ্য থাকে নিজের কর্মক্ষেত্র, কাজের চাপ থেকে মুক্ত হয়ে অন্তত একটা সপ্তাহ যেন একটু নিজের মতো করে কাটাতে পারে। আর ভ্রমন খরচ কম হওয়ায় থাইল্যান্ডই যেন সবার নজর কেড়ে নিয়েছে।
থাইল্যান্ড ভিসা
থাইল্যান্ডে যেতে হলে আপনাকে তাদের দেশের ভিসা নিতে হবে। বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড ভিসা পেতে হলে কোনো এজেন্সী দ্বারা ভিসার আবেদন করাটা ভালো। এজেন্সী দ্বারা ভিসার আবেদন করলে ২০০-৩০০ টাকা বেশি লাগলেও তারাই আপনার হয়ে সব কাগজপত্র গুছিয়ে দিবে। আর নিজে নিজে সব করতে গেলে দিনশেষে আপনার খরচ বেশিই পড়বে। সাথে বিভিন্ন জিনিশ নিয়ে প্যারা খাওয়া লাগবে।
তবুও নিজের ভিসা নিজে করতে হলে এই লিংক থেকে দেখে নিতে পারেন কিভাবে ভিসার আবেদন করবেন।
থাইল্যান্ড ভিসা ফি ৩৭৪০ টাকা। আর এজেন্সী থেকে প্রসেসিং ফি কত নিবে তা এজেন্সীই ঠিক করে থাকে। খুব ভালো আর রেপুটেডেট এজেন্সী হলে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা নিতে পারে। এটা ফিক্সড কোনো রেট নয়। আর বলে রাখা ভালো যে, আপনি থাইল্যান্ডের ভিসার জন্য আবেদন করলে নিজের ব্যাংক একাউন্টে কমপক্ষে ৬০০০০ টাকা থাকতে হবে। আর যদি ফ্যামেলী নিয়ে ট্রাভেল করতে চান আর আপনি যদি অভিবাবক হোন তাহলে ১,০০,০০০ টাকার উপর ব্যাংক ব্যালেন্স রাখা ভালো। আর থাইল্যান্ড ভিসা প্রোসেস করতে ৭ কর্মদিবস সময় লাগে। এই সময়ের ভিতর আপনাকে এম্ব্যাসী থেকে ফোন দিবে। এই ফোন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফোন রিসিভ করতে না পারলে ভিসা পাবেন না।
কখন যাবেন
থাইল্যান্ড বছরের যেকোনো সময় যাওয়া যায়। তবে শীতকালে সেখানে ট্যুরিস্ট এর চাপ বেশী থাকে। তাই আপনি বাজেট ট্রাভেলার হয়ে থাকলে এই সময়টা এড়িয়ে চলাই ভালো। বাজেট ট্রাভেলারদের জন্য সবথেকে ভালো সময় হচ্ছে মার্চ-এপ্রিল আর অক্টোবর-নভেম্বর মাস।
কিভাবে যাবেন
বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন থাইল্যান্ডের ফ্লাইট আছে। রিটার্ণ ভাড়া পরবে ১৮০০০ থেকে ২৫০০০ এর ভেতর। বিমানের টিকিট সবসময় নিজে কাটবেন। তাহলে আপনার সুবিধামতো সময়ে কাটতে পারবেন ও ভাড়া কম পড়বে। তবে থাইল্যান্ড ভ্রমনের জন্য আপনার আগে বিমানের টিকিট কেটে তারপর সেই টিকিট এর কপি থাইল্যান্ড ভিসার আবেদনের সময় জমা দিতে হবে। তাই বিমানের টিকিট কিনার সময় খেয়াল রাখবেন টিকিট রিফান্ডেবল কি না। কারন কম টাকা দিয়ে নন রিফান্ডেবল টিকিট কিনলেন। আর পরে যদি ভিসা না পান তাহলে পুরো টাকাটা জলে যাবে। তাই থাইল্যান্ড এর বিমান টিকিট কেনার সময় রিফান্ডেবল টিকিট কেনাই ভালো। আরেকটা কাজও করতে পারেন। আপনি যেই দিন থাইল্যান্ড ভ্রমন করবেন সেই দিনের বিমান ভাড়া আগেই জেনে রাখুন। পরে কোনো এজেন্সীতে ঐ দিনের বিমান ভাড়া নিয়ে খোজ করুন। তারা যদি আরো কম ভাড়া অফার করে তাহলে তাদের থেকেই টিকেট কিনে নিতে পারে। এজেন্সী থেকে টিকেট কিনার সময় সবকিছু (ফ্লাইট টাইম, লাকেজ এর জন্য এক্সট্রা ফি দিতে হবে কি না, রিফান্ডেবল কি না) বুঝেশুনে নিবেন।
সস্তায় কিভাবে বিমানের টিকেট কেনা যায় তা জানতে এই পোস্টটি পড়তে পারেন।
থাইল্যান্ডের মুদ্রাঃ
থাইল্যান্ডের মুদ্রা হচ্ছে থাই বাথ। ১ থাই বাথ= ২.৬৭ টাকা। যদিও ট্যাক্স, ভ্যাট, এক্সচেঞ্জ রেট, সব মিলিয়ে ১থাই বাথ এর মূল্য প্রায় ৩ টাকার মতো পড়ে যায়। তাই থাইল্যান্ডে কোনো কিছু খরচ করতে চাইলে সেই মূল্যের সাথে ৩ গুন করলে বাংলাদেশি মূল্য পেয়ে যাবেন। এয়ারপোর্ট থেকে বেড়িয়ে যেখান থেকে বেশি রেট দেয় সেখান থেকে টাকা এক্সচেঞ্জ করে নিতে পারেন।
কি কি দেখবেন
তো থাইল্যান্ড চলে তো গেলেন কিন্তু সেখানে দেখবেন কি কি বা কিভাবে শুরু করবেন এ নিয়ে অনেকেরই মনে প্রশ্ন থেকে থাকে। আসলেই থাইল্যান্ড অনেক বড় দেশ ফলে সেখানে দেখারও আছে অনেক কিছু। তাই সেখানে আগে থেকে প্লান করে না গেলে পস্তাতে হবে। এই পোস্টে শুধুমাত্র ব্যাংকক, পাতায়া, ফুকেট, ক্রাবি নিয়ে লিখবো। ব্যাংককের মূল ট্যুরিস্ট স্পট কিন্তু এইগুলোই। আপনি যদি শুধু ব্যাংকক-পাতায়া ঘুরে আসতে চান তাহলে ব্যাংককের সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্টে নেমে বাসে করে চলে যেতে পারেন পাতায়া। পরে পাতায়া ঘুরা শেষ করে ব্যাংকক ফিরে এসে ব্যাংকক ঘুরে দেখতে পারেন। আর ৪টা প্লেসই কভার করতে চাইলে প্রথমেই ফুকেট-ক্রাবি কভার করে তারপর ব্যাংকক-পাতায়া ঘুরে দেখাটাকে আমি ভালো মনে করি। তো আপনি পাতায়া বা ফুকেট যেখানেই যান না কেন আপনাকে এয়ারপোর্ট থেকে বাস ধরতে হবে। আবার ফুকেট গেলে প্লেনে করেও যেতে পারেন। শুনতে অবাক লাগলেও ফুকেট যাওয়ার প্লেন ভাড়া আর বাস ভাড়া প্রায় একই। কিন্তু এখানেও একটা ট্রিকস আছে। প্রায় এয়ারলাইন্সই ভাড়া কম নিলেও সেখানে লাকেজ ইনক্লুডেড থাকে না। ফলে সাথে লাকেজ বা বড় ব্যাগ থাকলে ২৫ ডলারের টিকিট হয়ে যায় ১০০ ডলার। তাই যে এয়ারলাইন্স লাকেজ ইনক্লুডেড বলবে সেই এয়ারলাইন্সেই ভ্রমন করবেন।
ফুকেট
ফুকেট যদি আপনি অঢেল টাকা পয়সা নিয়ে যান তাহলে সেখানে স্নোরকেলিং, স্কুভা ডাইভিং বা অন্যান্য এক্টিভিটিস করতে পারেন। আর বাজেট ট্রাভেলার হয়ে থাকলে আপনি ফ্রিতেই ফুকেটের মজা নিন। এটাই সবথেকে বেষ্ট। কারন হাতে গোনা কয়েকটা বিচ বাদে বাকি সবগুলোই ফ্রি। সেখানেই সময়টুকু কাটাতে পারেন। কামালা, কালিম, কাটা নোই, নাই হন ইত্যাদি বিচ সেখানকার পপুলার। তাছাড়া আইল্যান্ড ট্যুরে যেতে হলে কোহ লন বা কোকনাট আইল্যান্ড বেছে নিতে পারেন। মোট কথা পুরো ফুকেটই একটা দেখার মতো যায়গা। তবে ফুকেট গেলে অবশ্যই যেটা করবেন সেটা হচ্ছে জেমস বন্ড আইল্যান্ড আর ফিফি আইল্যান্ড ঘুরে দেখা। ফুকেটে গিয়ে একটা ট্যুর প্যাকেজ নিয়ে সেগুলো ঘুরে দেখবেন। সব বড় বড় ট্রাভেল ফোরামেই সবাই রিকমেন্ড করে থাকে ফিফি আইল্যান্ডে ১-২ রাত থাকার। এতে ফি ফি আইল্যান্ডের পুরো সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
ফুকেট নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আমার লেখা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।
আরো পড়ুনঃ
ক্রাবি
ফুকেটে ঘুরাঘুরি শেষ করে চলে আসতে পারেন ক্রাবিতে। ফুকেট থেকে ১৪০ বাথ বাস ভাড়া দিয়ে সহজেই চলে আসতে পারেন এই শহরে। এই শহরটিও অনেক জনপ্রিয় থাইল্যান্ডে। ফুকেটের মতো এই শহরেও মূল আকর্ষন হচ্ছে সি বিচ গুলা। অত্যন্ত সুন্দর ও জনপ্রিয় সি বিচগুলো সবসময় পর্যটককে নেশার মতো কাছে টানে। এখানে আপনি চাইলে সহজেই স্নোরকেলিং, স্কুভা ডাইভিং, প্যারা সেইলিং ইত্যাদি ওয়াটার এক্টিভিস গুলো করতে পারবেন। এখান থেকেও ফি ফি আইল্যান্ড এর ট্যুর প্যাকেজ পাওয়া যায়। তাই ফুকেট থেকে ফি ফি আইল্যান্ডে না গেলে ক্রাবি থেকেও সেখানে যেতে পারবেন। মোটকথা ফুকেট বা ক্রাবি যেকোনো যায়গা থেকেই আপনি বোটে করে ডে ট্রিপে বেড়িয়ে পড়তে পারেন। খরচ পরবে ১০০০ থেকে ১২০০ বাথের মতো। ক্রাবিতে আপনার পছন্দ ও সামর্থ্য অনুযায়ী ১-২ দিন থেকে যেতে পারেন। ক্রাবি নাইট মার্কেট, আর্ট লেনে ক্রাবির ঐতিহ্যবাহী নাচ, বিচের নানা ধরনের পার্টি, স্কুভাডাইভিং, আন্দামান সমুদ্রে স্পিড বোটে করে ঘুরা ইত্যাদিই ক্রাবির মূল আকর্ষন।
ক্রাবি নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আমার লেখা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।
পাতায়া
ক্রাবি ঘুরা শেষ করে চলে আসবেন পাতায়া। বাসে করে আসলে হাজার বাথের মতো খরচ পড়বে। প্লেনে আসলেও ঐ একরকমই ভাড়া পড়বে। পাতায়া শহরটি একেকজনের কাছে একেক রকম। রোমান্টিক কাপলদের কাছে একরকম, এডভেঞ্চার প্রেমীদের কাছেও এর মূল্য আছে, আছে নানা ট্যুরিস্ট স্পট, ব্যাচেলরদের কাছে তো পাতায়া স্বর্গরাজ্য, আর ইউরোপ আমেরিকার বয়স্কদের কাছে পাতায়া শেষ বয়সের আমোদ প্রমোদের স্থান। কী নেই পাতায়ায়? আছে সুন্দর সুন্দর সী বিচ। ঘুরে বেড়াবার মতো অসংখ্য ট্যুরিস্ট প্লেস। যা লিখে শেষ করার মতো না। ফেমাস প্লেস গুলোর মধ্যে নামকরা হচ্ছে, Sanctuary of truth, Jomtien Beach, Big Buddha, Underwater world Pattaya, Koh Larn Island, Tiger Park, Repleys Believe it or not museum, Mini Siam. এগুলো প্রত্যেকটিরই আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। আর Walking Street তো বিশ্বখ্যত। এই Red Light Area হচ্ছে পাতায়ার মূল আকর্ষন। একটা ৭০০ মিটার লম্বা রাস্তার দুই পাশে অসংখ্য বার ও নাইটক্লাবকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এই এরিয়া। রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে অসংখ্য তরুনী। ওয়াকিং স্ট্রিটে আগত সকল মানুষকে আনন্দ দেওয়াই তাদের কাজ। এ নিয়ে বিস্তারিত আর নাই লিখলাম। তবে কেউই আপনাকে কোনো কিছুর জন্য জোড় করবে না। তাদের বিজনেস পলিসিই এইরকম। তারা এমনভাবে নিজেদের প্রকাশ করবে যে আপনার মনই আপনাকে উস্কে দিবে। আপনার মনকে আপনার কন্ট্রোল করা জানতে হবে। পাতায়া আসলে অন্তত একটা রাত এইখানে কাটানো উচিত। ওয়াকিং স্ট্রিট সকালে আর দশটা রাস্তার মতোই থাকে। কিন্তু রাত যত গভীর হয় ওয়াকিং স্ট্রিট তত জেগে ওঠে। সারা রাত আপনি একটা পার্টি পার্টি ফিল পাবেন। দুই একবার সারাটা রাস্তা হেটেই দেখুন না। মোটেই খারাপ লাগবে না। কোনো একটা বারে ঢুকে সারাটা রাত কাটাতে পারেন। বার মানেই যে শুধু হার্ড ড্রিংক তা কিন্তু না। আপনি একটা কোকা কোলার ক্যান হাতে নিয়ে সারাটা রাত কাটাতে পারবেন। আর সম্ভব হলে কোনো অরজিনাল ম্যাসাজ স্পা থেকে ফুট ম্যাসাজ করে নিতে পারেন। এতে আপনার পায়ের সকল ব্যাথা ও সমস্যা দূর হয়ে যাবে। এই ওয়াকিং স্ট্রীটই পাতায়ার মূল বিশেষত্ব। তবে এসব ভালো না লাগলে বা ফ্যামেলী নিয়ে সেখানে গেলে এই যায়গায় না আসাই ভালো।
পাতায়া নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আমার লেখা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।
ব্যাংকক
ব্যাংকক হচ্ছে থাইল্যান্ডের রাজধানী ও থাইল্যান্ডের অধিক জনবসতিপূর্ণ জায়গার মধ্যে একটি। এখানে থাইল্যান্ড এর আসল ফিল পাবেন। এখানে আসলে থাইল্যান্ডের সব মন্দির ও ঐতিহাসিক স্থাপনার দেখা পাবেন৷ ব্যাংকক সম্পূর্ণ ঘুরে দেখতে হলে অন্তত ২ দিন সময় হাতে রাখা প্রয়োজন। এতে করে আপনি মোটামুটিভাবে সব প্লেস কভার করতে পারবেন। এজন্য নিচের রুটটি ফলো করতে পারেন।
Day 1: Grand Palace > Amulet Market > Wat Arun > Wat Phra Chetuphon
Day 2: National Museum of Royal Barges > Rattanakosin Exhibition Hall > Loha Prasat > Wat Banchamabophit > Ananta Samakhom Thorn Hall
Day 1: Grand Palace > Amulet Market > Wat Arun > Wat Phra Chetuphon
Day 2: National Museum of Royal Barges > Rattanakosin Exhibition Hall > Loha Prasat > Wat Banchamabophit > Ananta Samakhom Thorn Hall
তাছাড়াও হাতে সময় থাকলে ব্যাংকক সাফারী পার্ক ঘুরে দেখতে পারেন।
ব্যাংকক নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আমার লেখা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।
ব্যাংকক নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আমার লেখা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।
লোকাল ট্রান্সপোর্ট
সারা থাইল্যান্ডে লোকাল ট্রান্সপোর্ট এর জন্য স্কুটার ভাড়া পাওয়া যায়। নিঃসন্দেহে বলা যায় যে স্কুটারই সবচেয়ে কম খরচে ঘুরার উপায়। তবে কোনো কোনো যায়গায় স্কুটার চালানোর জন্য ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স লাগে। সেসব যায়গায় উবারই ভরসা। তবে সারাদিন সাইট সিইং এর জন্য গাড়িও ভাড়া পাওয়া যায়।কি কি খাবেন
একটা মজার বিষয় হলো মানুষ নিজের দেশে বসে বেশি টাকা খরচ করে থাই ফুড খায়, চায়নিজ খায়। কিন্তু চায়না বা থাইল্যান্ডে গিয়ে আবার সেই বেশি টাকা খরচ করে বাঙালি খাবার খায়। তবে আপনি যদি বাজেট ট্রাভেলার হয়ে থাকেন তবে থাই ফুড দু এক বেলা ট্রাই করে দেখতে পারেন। আর অরিজিনাল থাই ফুডের জন্য বেস্ট হচ্ছে রাস্তার পাশে ছোট ছোট দোকানগুলো। সেখান থেকে খাবার ট্রাই করে দেখতে পারেন। তবে অনেক যায়গায় তারা খাবারে শুকর ব্যাবহার করে থাকে। তাই বুঝে শুনে খাবার কিনবেন। থাই খাবারের মধ্যে নামকরা হচ্ছে
- টম ইয়াং কুং ( এটা মূলত নাকিকেলের দুধ, কাঁচা মরিচ, লেমন গ্রাস, মাশরুম ও চিংড়ি দিয়ে তৈরি এক ধরনের স্যুপ),
- স্টিম রাইস উইথ গ্রিনহোল পিপারকর্ণ (এটা মূলত সাদা ভাতের সাথে কাঁচা পেপে, আম, লেবুর রস ও মরিচ দিয়ে তৈরি এক ধরনের সালাদ তবে সাথে গ্রিন বা রেড চিকেন কারি খেতে হবে),
- প্লা পাও ( মাছের বারবিকিও),
- খাও মুন গাই (সাদা ভাতের সাথে স্টিমড চিকেন)।
ট্যুর খরচঃ
থাইল্যান্ড এমন একটি যায়গা যেখানে আপনি চাইলে কয়েক লাখ টাকাও খরচ করে আসতে পারবেন। আবার অল্প টাকায়ও ভ্রমন করা সম্ভব৷ আমি পুরো ব্লগে খরচাপাতি সম্পর্কে তেমন কিছু বিস্তারিত ভাবে বলি নি। কারন সময়ের সাথে সাথে এসব দাম পরিবর্তন হয়। যেমন আগে ভূটান ভ্রমন সস্তায় হলেও এখন ৬০ ডলার পার ডে শুধু সরকারি ট্যাক্সই দিতে হয়। তাই কোনো যায়গায় ভ্রমনের পূর্বে নিজে থেকেই আপডেট হওয়া ভালো। এজন্য আপনি tripadvisor ইউস করতে পারেন। এখানে আপ টু ডেট ইনফরমেশন পাবেন। তবে একেবারে হিসেব করে চললে ও কম খরচ করলে প্লেন ভাড়া বাদে ২০-২৫ হাজার টাকায় ট্যুর দেওয়া যায়। প্লেন ভাড়া এভারেজ ২০ হাজার ধরলে মুটামুটি ৪০-৪৫ হাজার টাকায় একটি সফল থাইল্যান্ড ট্যুর দেওয়া যায়। তবে আপনি কোনো যায়গায় কম স্টে করলে খরচ আরো কমে যাবে।
থাইল্যান্ড ভ্রমনে কিছু দরকারি টিপস
- থাইল্যান্ডে আগে থেকেই হোটেল বুকিং দিয়ে যাওয়া ভালো।এতে কম খরচে ঝামেলা মুক্ত থাকা যায়।
- কাপড়চোপড় বেশি নিয়ে যাওয়ার দরকার নেই। রাস্তার মোড়ে মোড়েই লন্ড্রি পাওয়া যায়। কাপড় একদিনেই পরিস্কার করে দেয় রিজনেবল প্রাইসেই।
- স্কাই ট্রেন বা পাবলিক বোটে চলাচল করলে খরচ অনেক কমাতে পারবেন।
- স্পিড বোটে করে ঘুরার সময় কিছু খাবার সাথে রাখবেন। কারন মাঝসাগরে কোনো রেস্টুরেন্টের ব্যাবস্থা আপাতত চালু নেই।
- কাটাচামচ দিয়ে খাবার খাওয়াকে থাইল্যান্ডে নিচু মানসিকতা বলে মিনে করা হয়।
- পায়ের উপর পা তুলে না বসাই ভালো। কারন ভুল করেও যদি আপনার পা কারো দিকে মুখ করা থাকে তো আপনার কপালে খারাবি আছে।
- বৌদ্ধ মন্দিরে যেতে হলে হাত ও পা ঢাকা থাকতে হবে। হাফ প্যান্ট পড়ে ঢুকা যাবে না।
- বোটের প্যাকেজ নেওয়ার সময় কমপ্লিমেন্টারি মিল দিবে কিনা জেনে নিবেন।
- পাতায়ার ওয়াকিং স্ট্রিট এ কোনো বারে বা ক্লাবে ঢুকলে দেখবেন অনেক মেয়ে এসে আপনার সাথে ভাব জমাবে। তারপর লেডি ড্রিংক খেতে চাইবে। আপনি তখন ভদ্রতার খাতিরে কিনে দিবেন৷ কিন্তু এই ফাদে ভূলেও পা দিয়েন না। ট্রিকস খাটিয়ে চলে আসবেন৷ এই লেডি ড্রিংক নামক বস্তুটি হচ্ছে স্প্রাইটের সাথে লেমন মিশিয়ে তৈরি করা এক পানীয়। আপনি এটি কিনে দিলে কিছু সময় তারা আপনার সাথে গল্প করবে ও নেশার ভান করবে। তারপর আবার নিজের রাস্তায় চলে যাবে। কিন্তু একটি লেডি ড্রিংক এর দাম প্রায় ৩০০ বাথ৷ যার অর্ধেক পাবে ক্লাব আর অর্ধেক পাবে সেই মেয়েটি। মাঝখান থেকে আপনার পুরোটাই লস।
- ক্যাশ টাকার সাথে পারলে একটা ডুয়েল কারেন্সী কার্ড ইউস করবেন। অনেক যায়গায় ক্যাশ নিতে চায় না। আবার অনেক যায়গায় কার্ড নিতে চায় না।
- থাইল্যান্ড এর রাজার ফ্যামেলি নিয়া ভালো মন্দ কিছুই কারো সাথে আলাপ করবেন না।
- গত কিছুদিন আগে একটা খুবই খারাপ খবর শুনলাম। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড যাওয়া এতোই সহজ হয়ে গিয়েছিলো যে চাইলেই সেখানে যাওয়া যেতো। প্লেন ভাড়া মাত্র ১৭০০০ টাকা। আর এর ফলে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ সেখানে যেতে শুরু করলো। ফলে যা ঘটার বাকি ছিলো তাও ঘটে গেল। বাংলাদেশীদের দ্বারা ইউরোপিয়ানরা ইভটিজিং এর শিকার হচ্ছেন!! বুঝুন কান্ড। দোষ করলো এক বাংলাদেশি আর নাম হয়ে গেল সবার। আসলে তাই হয়। দেশের বাইরে আপনিই তো আপনার দেশের রিপ্রেজেন্টিভ। সেখানকার পুলিশ এই অভিযোগ গুরুতর ভাবে নিলো। আর এতোই গুরুতর ভাবে নিলো যে এখন থাইল্যান্ডের ভিসা পেতে হলে অনেক ফরমালিটি পালন করতে হয়। তাই দয়া করে এমন কোনো কাজ করবেন না যেখানে আপনার নিজের দেশের বদনাম হয়।
Comments
Post a Comment