কলকাতা ভ্রমন গাইড

Kolkata


কলকাতা

সকালবেলা যদি আপনি নিজেকে কখনো একটা চায়ের দোকানে মাটির চায়েরকাপ হাতে আরো কয়েকজনের মাঝে আবিষ্কার করেন তাহলে ধরে নিবেন আপনি কলকাতা রয়েছেন। ৩০০ বছরের পুরোনো এই শহরের ইতিহাস আমাদের অনেকেরই জানা আছে। কবিগুরুর শহর, জীবনানন্দের শহর, শীর্ষেন্দু, সুনীল, সমরেশের শহর এই কলকাতা। এই শহরে ভ্রমনের সময় এমন এক প্রতিক্রিয়া কাজ করে শরীরে যা এই শহরের প্রতি মুগ্ধতার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় বহুগুন।  

তবে আবেগ অনুভুতি বাদ দিয়ে দিলেও কলকাতায় দেখার মতো অনেক যায়গা আছে। বাংলাদেশ থেকে যারাই ভারতের বিভিন্ন যায়গায় বেড়াতে যান তাদের বেশীর ভাগেররই ট্রানজিট প্লেস হয় কলকাতা। ফলে এই শহর ঘুরে দেখার একটা ইচ্ছা মনের মধ্যে থেকেই যায়। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে যাবেন কলকাতা।

কিভাবে যাবেনঃ

বাংলাদেশ থেকে স্থলপথ, জলপথ ও আকাশপথ সবদিক থেকেই কলকাতা যাওয়া যায়। এদের মধ্যে স্থলপথ ও আকাশপথটাই বেশী জনপ্রিয়। ঢাকা থেকে প্রতিদিন কলকাতায় বিমান যায়৷ তাই বিমানের টিকেট কিনে সহজেই চলে যেতে পারেন কলকাতায়। এক্ষেত্রে খরচ পরবে ৭০০০ টাকার মতো। আর যদি বাজেট ট্রাভেলার হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য স্থলপথ বেষ্ট অপশন। ঢাকা থেকে রাতে বেনাপোলগামী বাসে উঠে পড়ুন৷ ভোর নাগাদ পৌঁছে যাবেন বেনাপোল বর্ডারে। বর্ডারের সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ১০ টার ভেতর পৌঁছে যাবেন ওপারে। তারপর একটা অটোতে করে চলে যাবেন বনগাঁঁও রেল স্টেশন। সেখান থেকে ২০ রুপি দিয়ে লোকাল ট্রেনের টিকিট কিনে চলে যাবেন কলকাতা। লোকাল ট্রেনে ভীর হয় খুব বেশি আর ১ ঘন্টা পর পর ছাড়ে। আর লোকাল ট্রেনে উঠতে ইচ্ছে না হলে ১৫০ রুপি খরচ করে বাসে চলে যেতে পারেন কলকাতা।

কোথায় থাকবেনঃ

কলকাতায় থাকার যায়গা নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। পুজোর সময় আর ঈদের সময় বাদে অন্য সময় গেলে হোটেল আগে থেকে বুকিং না দিলেও হয়। ৫ তারকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকায়ও থাকার জন্য রুম পাওয়া যায়। কলকাতায় পৌঁছে ট্যাক্সি অথবা মেট্রোতে করে চলে যাবেন মীর্জা গালীব স্ট্রীট। সেখানে অনেক বাজেট হোটেল আছে। সেগুলোর কোনো একটায় থাকতে পারেন। এই লিংকে কিছু হোটেলের নাম আর ফোন নাম্বার দেওয়া আছে।

কলকাতার খাবারঃ

কলকাতায় বাঙালী খাবারই বেশি পাওয়া যায়। তাই খাবার নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয় না। তবে কলকাতার স্ট্রীট ফুড অনেক বিখ্যাত৷ একটা বিকেল শুধু স্ট্রীট ফুড ট্যুর দেওয়ার জন্য রেখে দিতে পারেন।

কী কী দেখবেনঃ

কলকাতার সব দেখতে চাইলে কি কি দেখবেন সেটার লিস্ট করতেই মোটামোটি এক দিন লেগে যাবে। তবে কলকাতায় যেখানেই ঘুরতে যান না কেনো সবথেকে তাড়াতাড়ি ও কম খরচে পৌঁছাতে মেট্রো রেল এর বিকল্প নেই। মেট্রোতে করেই সম্পূর্ণ কলকাতা ঘুরে দেখতে পারেন। অন্তত ৩ টা দিন হাতে নিয়ে ঘুরা উচিৎ। এতে করে সবটা না হলেও অনেক কিছুই দেখতে পারবেন। 
[যেই দিন কলকাতা পৌঁছাবেন সেই দিনটা বাদ দিয়ে আরো ৩ দিন ধরবেন। কারন ঢাকা থেকে এতোটা পথ জার্নি করে ঐ দিন ঘুরার জন্য সময় আর ইচ্ছে কোনোটাই থাকে না।]

১ম দিন

১ম দিনের শুরু করতে পারেন সমস্ত বাঙালীর গৌরব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জোঁঁড়াসাকোর বাড়ি দিয়ে।  এটা রবীন্দ্র ভারতী মিউজিয়াম নামে পরিচিত। এখান থেকে বের হয়ে চলে যাবেন মার্বেল প্যালাস। এটি ১৮৩৫ সালে নির্মিত এক বিরাট প্রাসাদ। রবীন্দ্র ভারতী মিউজিয়াম থেকে ৫ মিনিটের পায়ে হাঁটা পথ। সেখান থেকে বিরলা ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল মিউজিয়াম এ চলে যেতে পারেন। মিউজিয়ামে আপনি বিজ্ঞানের অসংখ্য নিদর্শন পাবেন। তারপর বিকেল বেলাটা নিজের মতো করে ঘুরে কাটিয়ে দিতে পারেন।

২য় দিন

এই দিনের শুরুটা করতে পারেন দক্ষিণেশ্বরের কালীঘাট মন্দির থেকে। হিন্দু ধর্মাবলম্বী না হলেও মন্দিরটা দেখে আসবেন। তারপর সেখান থেকে চলে যাবেন বেলুর মঠ। হুগলী নদীর তীরে অবস্থিত এই মন্দিরটি অনেক সুন্দর। তারপর সেখান থেকে চলে যাবেন বিখ্যাত হাওরা ব্রীজ। কলকাতায় এসে এই ব্রীজ ঘুরে দেখা মাস্ট। সেখান থেকে চলে যাবেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে। রানী ভিক্টোরিয়ার সৌজন্যে নির্মিত এই ভবনটি কলকাতার অনেকটা প্রতিনিধিত্ব করে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল দেখা শেষ করে পার্ক স্ট্রীটটা পায়ে হেটে ঘুরে দেখতে পারেন। তারপর চলে যাবেন ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম এ৷ এখানে আপনি প্রাচীন কলকাতার অনেক নিদর্শন পাবেন। এভাবেই ২য় দিনটি পুরোটা দৌঁড়ের উপর কাটিয়ে দিতে পারেন।


৩য় দিন

এই দিনটা পুরোটা বরাদ্দ রাখবেন সায়েন্স সিটি ঘুরার জন্য। এটি আসলেই এতো বড় যে ঘুরে দেখতে হলে সারা দিন লেগে যায়। এর ভিতরে প্রতিটা পরতে আপনি পাবেন বিজ্ঞানের ছোয়া৷ বেশ কয়েকটা শো দেখানো হয় সেখানে। একটাও মিস দেওয়া উচিৎ না। আমার সবথেকে ভালো লেগেছিলো স্পেস থ্রীয়েটর। এটা মিস দিবেন না।  

Kolkata Science City
                    Wikipidia
সায়েন্স সিটির এন্ট্রি ফি


তাছাড়া সায়েন্স সিটির অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকেও অনেক ইনফরমেশন পেতে পারেন।    

কলকাতাকে বলা হয় যাদুর শহর। আপনি শুধু এই শহরেই শতভাগ বাঙালীয়ানা পাবেন। একবার ঘুরে আসলে সবসময় এই শহরের প্রতি আপনার একটা দূর্বলতা কাজ করবে। আর বাংলাদেশীদের এই শহরের মানুষেরা একটু বেশিই ভালোবাসে।  

খরচ

আপনি যদি বাজেট ট্রাভেলার হোন তাহলে ৫ হাজার টাকার ভেতরেই এই ট্যুর কমপ্লিট করে ফেলতে পারবেন। ঢাকা থেকে ৫-৬০০ টাকায় চলে যাওয়া যায় বেনাপোল বন্দরে। তার মানে ১০০০-১২০০ টাকার ভেতর যাওয়া আসা। আর বনগাও থেকে কলকাতা যেতে লোকাল ট্রেন ভাড়া মাত্র ২০ রুপি। অর্থাৎ যাওয়া আসায় খরচ ৪০ রুপি। এর মানে ১৫০০ টাকার ভেতর যাওয়া আসা কমপ্লিট। ৪ রাতের হোটেল ভাড়া পরবে ১০০০ টাকার মতো যদি শেয়ার করে থাকেন। সলো ট্রাভেলার এর জন্য আরো ৫০০ টাকা বাড়তি ধরতে পারেন। আর খাওয়া দাওয়ার জন্য ৩০০ টাকা দিন প্রতি রাখলেই যথেষ্ট। ৫ দিনে হয় ১৫০০ টাকা। তার মানে ৪০০০ টাকায় যাওয়া-আসা, থাকা-খাওয়া কমপ্লিট। বাকী রইলো ঘুরা ঘুরি। মেট্রোতে করে ঘুরলে ৫০০ টাকায়ই এই সবকিছু ঘুরে দেখা সম্ভব। বাকী ৫০০ টাকা ট্যুরিস্ট প্লেস গুলোতে এন্ট্রী ফি হিসেবে ধরে রাখতে পারেন। তারমানে ৫ হাজার টাকায় আপনার ট্যুর কমপ্লিট।

আরো পড়ুনঃ

 



 

Comments