সাজেক ভ্যালী হচ্ছে বাংলাদেশের অপরূপ রূপের ঝলকের একটি নাম। আপনাদের যদি কখনো মেঘের দেশে ঘুরে বেড়াবার ইচ্ছে হয় তাহলে আপনারা সাজেক ভ্যালীতে যেতে পারেন। কারন এটিকে বলা হয় মেঘের রাজ্য। মেঘের সাথে পাহাড়ের ধাক্কাধাক্কি দেখতে দেখতে আপনি কখন যে সাজেকের প্রেমে পড়ে যাবেন তা বুঝতেই পারবেন না। ঘুম থেকে সকালে উঠে দেখতে পাবেন মেঘ আপনার পায়ের কাছে এসে খেলা করছে । কি ভাবতেই অবাক লাগছে তাই না? তাহলে আর দেরী কেন যেনে নেই কিভাবে যাওয়া যায় মেঘের এক অপরূপ রাজ্য সাজেকে।
কখন যাবেন?
সাজেক সারা বছরই পর্যটক এ ভর্তি থাকে। তবে যদি মেঘের সাথে দেখা পেতে ইচ্ছুক হোন তাহলে বর্ষার সিজন আপনার জন্য ভালো হবে। এ সময়ে প্রচুর মেঘের দেখা পাবেন। তাই এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর সাজেক ভ্রমনের উত্তম সময়। তবে এখানে শীতের সময়ও প্রচুর ট্যুরিস্ট যায়।
কিভাবে যাবেন?
যদি আপনি ঢাকার বাইরের হয়ে থাকেন তো ঢাকায় আসতে হবে। কারণ সাজেক বান্দরবান এ অবস্থিত হলেও খাগড়াছড়ি দিয়ে যাওয়া ভালো। কারন বান্দরবান দিয়ে আসতে হলে নৌকায় করে আসা লাগে। তো আপনি ঢাকার আব্দুল্লাপুর থেকে খাগড়াছড়ি যাওয়ার বাস পেয়ে যাবেন। প্রায় সব বাস সার্ভিসই এই রুটে সার্ভিস দিয়ে থাকে। এজন্য ভাড়া পড়বে ৫২০ টাকা(নন এসি) ও ১০০০-১২০০ টাকা(এসি)। শীতের সময় গেলে এসি বাসে যাওয়া ভালো। কারন এতে ঠান্ডা কম লাগে। সকাল ৫-৬টার দিকে খাগড়াছড়ি পৌঁছে যাবেন। সেখানে বাস থেকে নেমে শাপলা চত্বরে যাবেন। সেখানে জিপ গাড়ির(চাদের গাড়ি) কাউন্টার পাবেন। সেখান থেকে আপনার গাড়ি ভাড়া করা লাগবে। একটা গাড়িতে ১০-১২ জন বসা যায়। আর আপনি যদি একা যান বা ২-৩ জন যান তাহলে কাউন্টারে কথা বললেই তারা অন্য গ্রুপ মেনেজ করে দিবে। তখন তাদের সাথে আপনি যেতে পারবেন। তাছাড়া সিএনজি বা মোটরসাইকেল দিয়েও সাজেক যাওয়া যায়। নিচে জীপ গাড়ির ভাড়া দিয়ে দিলাম।
খাগড়াচড়ি টু সাজেক যাওয়া-আসা ৫৪০০/-
খাগড়াচড়ি টু সাজেক ১ রাত্রি যাপন ৭৭০০/-
খাগড়াচড়ি টু সাজেক আলুটিলা, রিচাং ঝর্ণা,
ঝুলন্ত ব্রীজ, ১রাত্রি যাপন ৯৭০০/-
খাগড়াচড়ি টু সাজেক ২ রাত্রি যাপন ১০৫০০/-
খাগড়াচড়ি টু সাজেক আলুটিলা,
রিচাং ঝর্ণা, ঝুলন্ত ব্রীজ, ২রাত্রি যাপন ১২৫০০/-
মনে রাখবেন এটা সম্পূর্ণ একটা জীপ গাড়ির ভাড়া। আর আপনি একা গেলেও টেনসন নিয়েন না অনেক গ্রুপ পাবেন। তাদের সাথে জয়েন হয়ে যেতে পারেন। সাজেক গেলে অবশ্যই একদিন থাকার ট্রাই করবেন। সাজেক যাওয়ার সময় নিজের এন আইডি কার্ডের ফটোকপি অথবা স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের ফটোকপি ও মূল কপি সাথে রাখা ভালো। আর্মি দেখতে চাইতে পারে।
কোথায় থাকবেন?
সাজেকে বর্তমানে প্রচুর পরিমানে হোটেল রয়েছে। হোটেল ভাড়া আমার কাছে অত্যাধিক মনে হয়েছে। হোটেল আগে থেকে বুক দিয়ে আসা ভালো। এবার আসি একটা মূল বিষয়ে। সাজেক আগে অনেক সুন্দর ছিল। পাহাড়ের পাশে বসে মেঘ দেখা যেত। কিন্তু বর্তমানে পর্যটক বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে প্রচুর পরিমান রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্ট গজিয়ে উঠছে। তাই এখন আপনার মেঘ দেখার একটাই উপায়। সেটা হলো ভালো কোনো রিসোর্ট বুক করা। কিন্তু ঐ যে বলেছিলাম, গলা কাটা দাম। একটা নরমাল হোটেলেই ১৫০০ টাকার কমে রুম দিতে চায়না। সেখানে ভালো একটা রুমের দাম পড়বে ৩৫০০-৪০০০ টাকা। তাই এই বিষয়টা মাথায় রেখেই যাবেন। আর আমার মতে একটা ভালো রিসোর্ট বুক করাটাই বেটার। যদি ২-৩ জন হোন তাহলে একরুমেই রাত কাটাতে পারবেন ও খরচটা ভাগ হয়ে যাবে। এতে লাভের লাভ একটাই হবে, যে বারবার তো আর সাজেক আসবেন না, তাই একবারেই সব থেকে বেস্ট ভিউটা আপনার স্বৃতিতে গেথে নিতে পারবেন। এরকম কিছু হোটেলের নাম ও ঠিকানা নিচে দিয়ে দিলাম।
সাজেক রিসোর্ট – এটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত রিসোর্ট। যার দ্বিতীয় তলায় চারটি কক্ষ আছে। খাবারের ব্যবস্থা আছে। যোগাযোগঃ ০১৮৫৯০২৫৬৯৪ / ০১৮৪৭০৭০৩৯৫।
রুন্ময় রিসোর্ট – এটি সাজেকে অবস্থিত। এর নীচ তলায় তিনটি কক্ষ আছে। প্রতিটি কক্ষে ২ জন থাকতে পারবেন। অতিরিক্ত টাকা দিয়ে অতিরিক্ত বেড নিতে পারবেন। চারটি তাবু আছে, প্রতি তাবুতে চার জন থাকতে পারবেন। যোগাযোগঃ ০১৮৬২০১১৮৫২।
আলো রিসোর্ট – এটি সাজেকের একটু আগে রুইলুই পাড়াতে অবস্থিত। এটিতে মোট ৬ টি রুম আছে। ডাবল রুম ৪ টি ( ২টি খাট করে)। সিংগেল রুম ২ টি। যোগাযোগঃ পলাশ চাকমা – ০১৮৬৩৬০৬৯০৬ অথবা ০৩৭১-৬২০৬৭। আদিবাসিদের ঘরে – এ ছাড়া চাইলে আদিবাসিদের ঘরেও থাকতে পারবেন। যোগাযোগঃ মাখুমা – ০১৫৫৩০২৯৬১৭ ইমানুয়েল রিসোর্ট – এটিতে ৮ টি রুম আছে। সবগুলো কমনবাথ। যোগাযোগ: ০১৮৬৫৩৪৯১৩০, ০১৮৬৯৪৯০৮৬৮ (মইয়া লুসাই) ( বিকাশ) এই রিসোর্টটা একদম সাধারণ একটা রিসোর্ট, বন্ধু বান্ধব বা যাদের থাকা নিয়ে কোন অভিযোগ নেই তারা এখানে থাকতে পারেন মেয়ে বা পরিবারের জন্য এটা আদর্শ রিসোর্ট নয়। সারা রিসোর্ট – এটি রুইলুই পাড়ায় অবস্থিত। এর মালিক রুইলুই পাড়ার কারবারী মনা দাদা। এখাণে ৪ টি রুম আছে। তিনটি এটাচ বাথ। একটি কমন বাথ। প্রতি রুমে একটি খাট আছে। ২ জন থাকা যাবে। রুম গুলো একটু ছোট। টিনের তৈরী। সোলার আছে। যোগাযোগ: ০১৫৫৪৫৩৪৫০৭।
মেঘ মাচাং রিসোর্ট – ভাড়া পড়বে আনুমানিকঃ ২৫০০ – ৩৫০০ টাকার মত। যোগাযোগ – ০১৮২২১৬৮৮৭৭
মেঘপুঞ্জি রিসোর্ট – ফোন নাম্বার ০১৯১১৭২২০০৭ ভাড়া আনুমানিক ২৫০০-৩০০০ টাকা প্রতিরাত।
রুন্ময় রিসোর্ট – এটি সাজেকে অবস্থিত। এর নীচ তলায় তিনটি কক্ষ আছে। প্রতিটি কক্ষে ২ জন থাকতে পারবেন। অতিরিক্ত টাকা দিয়ে অতিরিক্ত বেড নিতে পারবেন। চারটি তাবু আছে, প্রতি তাবুতে চার জন থাকতে পারবেন। যোগাযোগঃ ০১৮৬২০১১৮৫২।
আলো রিসোর্ট – এটি সাজেকের একটু আগে রুইলুই পাড়াতে অবস্থিত। এটিতে মোট ৬ টি রুম আছে। ডাবল রুম ৪ টি ( ২টি খাট করে)। সিংগেল রুম ২ টি। যোগাযোগঃ পলাশ চাকমা – ০১৮৬৩৬০৬৯০৬ অথবা ০৩৭১-৬২০৬৭। আদিবাসিদের ঘরে – এ ছাড়া চাইলে আদিবাসিদের ঘরেও থাকতে পারবেন। যোগাযোগঃ মাখুমা – ০১৫৫৩০২৯৬১৭ ইমানুয়েল রিসোর্ট – এটিতে ৮ টি রুম আছে। সবগুলো কমনবাথ। যোগাযোগ: ০১৮৬৫৩৪৯১৩০, ০১৮৬৯৪৯০৮৬৮ (মইয়া লুসাই) ( বিকাশ) এই রিসোর্টটা একদম সাধারণ একটা রিসোর্ট, বন্ধু বান্ধব বা যাদের থাকা নিয়ে কোন অভিযোগ নেই তারা এখানে থাকতে পারেন মেয়ে বা পরিবারের জন্য এটা আদর্শ রিসোর্ট নয়। সারা রিসোর্ট – এটি রুইলুই পাড়ায় অবস্থিত। এর মালিক রুইলুই পাড়ার কারবারী মনা দাদা। এখাণে ৪ টি রুম আছে। তিনটি এটাচ বাথ। একটি কমন বাথ। প্রতি রুমে একটি খাট আছে। ২ জন থাকা যাবে। রুম গুলো একটু ছোট। টিনের তৈরী। সোলার আছে। যোগাযোগ: ০১৫৫৪৫৩৪৫০৭।
মেঘ মাচাং রিসোর্ট – ভাড়া পড়বে আনুমানিকঃ ২৫০০ – ৩৫০০ টাকার মত। যোগাযোগ – ০১৮২২১৬৮৮৭৭
মেঘপুঞ্জি রিসোর্ট – ফোন নাম্বার ০১৯১১৭২২০০৭ ভাড়া আনুমানিক ২৫০০-৩০০০ টাকা প্রতিরাত।
জুমঘর এর ফোন নাম্বার – ০১৮৮৪-২০৮০৬০
রুইলুই পাড়া ক্লাব হাউজ – এটি সাজেকের একটু আগে রুইলুই পাড়াতে অবস্থিত। এখানে ১৫ জনের মত থাকতে পারবেন। ভাড়া জনপ্রতি ১০০-২০০ টাকা করে দিতে হবে। নিজেরা রান্না করে খেতে পারবেন। এর কেয়ার টেকার মইয়া লুসাই দাদা সব ব্যবস্থা করে দিবে। লক্ষন নামেও একজন আছে, প্রয়োজনে আপনাদের সহযোগীতা করবে। এখানে দুইটি টয়লেট আছে। একটি ফ্রি ব্যবহার করতে পারবেন। অন্যটির জন্য ২০০ টাকা প্রদান করতে হবে। যোগাযোগঃ (লক্ষন ০১৮৬০১০৩৪০২) অথবা (০১৮৩৮৪৯৭৬১২)
কি কি দেখবেন?
সাজেকে সাইটসিইং এর জন্য বেশ কিছু প্লেস রয়েছে। সাজেকে যাওয়ার সময় আপনি আলুটিলা গুহা ও রিসাং ঝর্ণা হয়ে যেতে পারেন। আবার ফিরে আসার সময়ও এসব স্পট কভার করতে পারেন। তবে প্রথম দিন সাজেকে যাওয়ার সময়ই এসব স্পট কভার করা ভালো। সাজেকে যে দিন যাবেন সে দিন কলাংক পাহাড়ে চড়তে পারেন। পাহাড়ের উপর থেকে অনেক ভালো ভিউ পাওয়া যায়। রাতে রিসোর্টে থেকে পরদিন উপভোগ করতে পারেন সুর্যাস্ত। যদি আপনি মেঘপুঞ্জি রিসোর্ট বা অন্যকোনো রিসোর্টে থাকেন যেখানে পূর্বদিকে মুখ করা বেলকোনী রয়েছে তাহলে আপনার কষ্ট করে হেলিপ্যাডে যাওয়া লাগবে না। রুমে বসেই এক অপার্থিব সুন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। আর অন্য কোনো রিসোর্টে থাকলে আপনার খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে। তারপর চলে যাবেন হেলিপ্যাডে। সাজেকের ভোর কখনোই মিস করবেন না।
![]() |
আলুটিলা গুহা |
![]() |
ছবি সোর্সঃ ট্রাভেলার্স অফ বাংলাদেশ |
খাবার ব্যবস্থাঃ
সাজেকে খাবার এর জন্য প্রচুর রেস্তোরা রয়েছে। কাজেই টেনশন নেই। তবে খাবারের প্রাইজটা অনেক বেশী। যেমন আপনার একপ্লেট ডাল ভাত ও সাথে ডিম ভোনা খাওয়ার জন্য গোনা লাগতে পারে ১২০ টাকা। আর মাংস খেতে চাইলে ১৫০ টাকা। খাবার অর্ডার করলে ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করতে হয় কারন তারা রান্না করে খাবার দেয়। তাই একটু আগেভাগে খাবার অর্ডার করবেন।
০ দিনঃ রাতে ঢাকা বাসে খাগড়াচড়ির উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা
১ম দিনঃ সকালে খাগড়াচড়ি থেকে সাজেকে যাওয়া। ও রাতে সাজেকে স্টে।
২য় দিনঃ সাজেক থেকে বিকালে খাগড়াচড়ি ফিরে আসা। রাতে ঢাকাগামী বাসে উঠে পড়া
৩য় দিনঃ সকালে আপনি ঢাকা পৌঁছে যাবেন।
খরচাপাতিঃ
সাজেকে যেতে হলে ঢাকা থেকে নন এসি বাস ভাড়া ৫৫০ এর মধ্যে। মানে ১১০০ টাকায় যাওয়া আসা। তারপর খাগড়াচড়ি থেকে আবার সাজেকে যাওয়ার সময় একটা জীপ এ যদি ১০ জন ও শেয়ার করে যান (নরমালি ১৩-১৫ জন যাওয়া যায়) তাহলে ৭৭০ টাকা জনপ্রতি খরচ পরে যাওয়া আসা সহ। আর খাওয়া দাওয়ার জন্য+ অন্যান্য খরচ বাবদ ১২০০ টাকা যথেষ্ট। আর রইলো বাকী হোটেল খরচ। এখানে আপনি যদি ১৫০০ টাকার রুমে ৪ জন থাকেন তাহলে জনপ্রতি কম খরচ পড়বে। আবার একটা ভালো রিসোর্টে থাকলে খরচ বাড়বে। তাই এইখানে আপনি সিদ্ধান্ত নিবেন। তবে মোটামোটি ৫০০০ টাকায় অত্যন্ত আরামদায়ক ভাবেই ট্যুর কমপ্লিট করা যায়।
- সাজেকে বিদ্যুৎ নেই। সেখানে জেনারেটর দিয়ে পাওয়ার সাপ্লাই দেওয়া হয়। তাই পাওয়ার ব্যাংক সাথে নিয়ে যাবেন।
- খাগড়াছড়ি থেকে পানি সাথে করে নিয়ে যাবেন। সাজেকে পানির দাম বেশী। আর দয়া করে আই রিপিট দয়া করে পানির বোতলটা সাথে করে নিয়ে আসবেন। যেখানে সেখানে ফেলবেন না।
- রবি এবং এয়ারটেল এর নেটওয়ার্ক ভালো পাওয়া যায়। অন্য কোনো নেটওয়ার্ক নেই বললেই চলে।
আরো পড়ুনঃ
Comments
Post a Comment