একদিনের ট্যুরে ঘুরে আসুন শ্রীমঙ্গল থেকে


শ্রীমঙ্গল

বাংলাদেশে থেকে চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলের নাম শুনে নি এমন মানুষ খোঁজে পাওয়া দূষ্কর। চারিদিকে অসংখ্য চা বাগান, সাথে বিখ্যাত সাত রঙের চা এসব কারনেই মূলত শ্রীমঙ্গল মানুষকে কাছে টানে। ঢাকা শহরের প্রচন্ড জ্যাম, কোলাহল আর দূষিত বাতাস থেকে বের হয়ে একদিনের ছোট্ট একটা ট্যুর দিলে নেহাতই খারাপ হয় না। শ্রীমঙ্গল প্রায় সারা বছরই ট্যুরিস্টে ভরা থাকে। ঢাকা থেকে অতি সহজে এখানে যাতায়াত করা যায়। এটাই মূলত ট্যুরিস্ট আকর্ষনের একটি বড় কারন। তাই আর কথা না বাড়িয়ে চলুন দেখে নেওয়া যাক বিস্তারিত।

কিভাবে ও কখন যাবেন

আগেই বলেছি শ্রীমঙ্গলে সারা বছরই যাওয়া যায়৷ তবে শুকনো সিজন বা ড্রাই সিজনে গেলে একটু ভালো হয়। কারন বৃষ্টির দিনে পাহাড় পর্বতে ঘুরে বেড়ানো যায় না। তাই চেষ্টা করবেন ড্রাই সিজনে যাওয়ার। 
ঢাকা থেকে দুইভাবে শ্রীমঙ্গলে যাওয়া যায়৷ বাসে করে ও ট্রেনে করে৷ কিন্তু বাসে করে গেলে সুবিধা হয়। কারন ট্রেনের শিডিউল এতোটা ভালো না। সব ট্রেনই দিনের বেলা ঢাকা থেকে ছাড়ে। রাতের বেলা যে ট্রেনগুলো ছাড়ে সেগুলো রাত ১টা ২টায় শ্রীমঙ্গলে পৌঁছায়। মূলত ট্রেন গুলো সিলেটের সুবিধামতো শিডিউল করা। তাই বাসে করে যাওয়াই ভালো। বাসভাড়া পরে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা নন এসি। রাতে ঢাকা থেকে ছাড়ে ও খুব ভোরে শ্রীমঙ্গলে পৌঁছায়।

কি কি দেখবেন

শ্রীমঙ্গলে পৌঁছে যেকোনো একটা রেস্তোরায় নাস্তা করে নিবেন। তারপর একটা সিএনজি ভাড়া করে নিবেন সারাদিনের জন্য।  যেহেতু এটি একটি বাজেট ট্রিপ তাই সারাদিন দৌঁড়ের উপর থাকতে হবে।

বাইক্কা বিলঃ সি এন জি নিয়ে প্রথমেই চলে যাবেন বাইক্কা বিল। ভোরবেলা অনেক সুন্দর লাগে বিলটি। অনেক শাপলা ফুল ফুটে থাকে। সেখানে সকালটা কাটিয়ে দিতে পারেন।


মাধবপুর লেকঃ বাইক্কা বিল থেকে ফিরে চলে যেতে পারেন মাধবপুর লেক। বাইক্কা বিল থেকে এটা অনেক দূরে। লেকটির চারপাশের পরিবেশ অনেক সুন্দর। চারপাশে পাহাড় আর মাঝখানে এই লেকটি। সেখানে কিছুটা সময় কাটাতে পারেন।


নূরজাহান টি এস্টেটঃ এটি নূরজাহান চা পাতার মালিকানাধীন একটা চা বাগান। মূলত চা বাগানের ভেতর ঢোকার জন্যই এখানে থামা। মাধবপুর লেক থেকে ফেরার সময় এটা পাবেন। তাই কাছ থেকে চা বাগান দেখতে মিস করবেন না।


গ্রাড সুলতান টি রিসোর্টঃ এটি একটি ৫ তারকা মানের হোটেল। বাংলাদেশের সব বড় বড় ৫ তারকাগুলোর মধ্যে একটি। ভেতরে ঢুকার পারমিশন নাই সাধারন মানুষের। তাই যা দেখার বাইরে থেকেই দেখতে হবে। এটিও মাধবপুর লেক থেকে আসার পথে পড়বে।


লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানঃ এটি একটি জাতীয় উদ্যান। অসাধারন নিরিবিলি পরিবেশ। চারিদিকে জঙ্গল ও শুনশান নিরবতা। আর এরই মাঝেদিয়ে চলে গেছে একটি রেললাইন। মাধবপুর লেক থেকে ফিরে সেখানে চলে যেতে পারেন।


বধ্যভূমি ৭১ঃ লাউয়াছড়া থেকে ফিরে এসে দুপুরের খাবার খেয়ে নিবেন। খাওয়ার জন্য অনেক রেস্তোরা পাওয়া যায়। তবে পানসী অনেক নামকরা। তবে বধ্যভূমী ৭১ এও একটা রেস্তোরা আছে। এখানেও লাঞ্চটা সেরে নিতে পারেন। কিছুটা সময় এখানে কাটানোই যায়।

ফিনলে টী এস্টেটঃ এটিও একটি চা বাগান যা ফিনলের মালিকানাধীন। তবে এটা পরিচিত লাল পাহাড় নামে। লাল পাহাড়ে একটা হিন্দু মন্দির আছে। এখানে অবশ্যই আসবেন। দেখার মতো একটা যায়গা। তবে এগুলো কিন্তু প্রাইভেট প্রোপার্টি। তাই গার্ডরা অনেক সময় ঢুকতে দেয় না ভেতরে।


নীলকন্ঠ টী কেবিনঃ এটা ৭ কালারের চায়ের জন্মস্থান হিসেবে পরিচিত। এখানেই এটার উদ্ভাবন হয়। ফিনলে টী এস্টেট থেকে বেড়িয়েই এটা পাবেন। এখানে প্রথমবার এসে থাকলে আর কয়েকজন থাকলে সবাই একসাথে সাত রঙের চা অর্ডার করে বসবেন না। আসলে এটি দেখতে যতোটা আকর্ষনীয় খেতে কিন্তু ততোটা নয়। তাই একটা সাত রঙের চা অর্ডার করে কয়েকজনে মিলে টেস্ট করে দেখবেন। তবে সেখানে স্পেশাল মিল্ক টী পাওয়া যায়।  এই চা খেলে এর স্বাদ আর কোনোদিন ভূলতে পারবেন না।


নীলকন্ঠ থেকে বেড়িয়ে পানসীতে চলে যাবেন। এই সবগুলো প্লেস কভার করলে সি এন জি ভাড়া ১০০০ থেকে ১২০০ দিলেই যথেষ্ঠ। তারপর পানসীতে আড্ডা দিয়ে সন্ধ্যেটা কাটিয়ে দিতে পারেন। পরে সেখান থেকে আবার বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ঢাকা গামী বাসে উঠে পড়বেন। ভোরে ঢাকা পৌঁছে যাবেন। এভাবেই যান্ত্রিক শহরের কোলাহল থেকে বেড়িয়ে একটা দিন চায়ের রাজধানীতে ঘুরে যেতে পারেন।

তবে শ্রীমঙ্গলের আরেকটা চমক রয়েছে। সেটা হচ্ছে হাম হাম জলপ্রপাত। বাংলাদেশের সবথেকে বড় ঝর্ণাগুলোর একটি। তবে এখানে যেতে হলে আপনার আরো একটা দিন এক্সট্রা সময় লাগবে। সাথে অবশ্যই যেটা লাগবে সেটা হচ্ছে ট্রেকিং করার মনোবল। ভয়ানক পাহাড়গুলো ডিঙ্গিয়ে জঙ্গল মাড়িয়ে, শত শত জোঁকের মাঝে দিয়ে ছোট্ট একটা পথ ধরে হাটতে হয় ঝাড়া ২ ঘন্টা। তারপর আসে ঝিরিপথ। সেই ঝিরিপথের বুক পর্যন্ত উচু জল মাড়িয়ে, জোকের কামড় খেয়ে হাটতে হয় আরো বেশ কিছু পথ। তারপর দেখা মিলে হাম হাম জলপ্রপাত এর। এক কথায় ভয়ানক সুন্দর। 

দেখুন কিভাবে হাম হাম জলপ্রপাতে  যাবেন

 খরচ

একদিনের এই ট্যুর অত্যন্ত ভালোভাবেই ১৫০০ টাকা জনপ্রতিতে শেষ করা সম্ভব। নিচে খরচ দিয়ে দিচ্ছিঃ
ঢাকা টু শ্রীমঙ্গল বাস ভাড়া ৪০০ টাকা (সর্বোচ্চ)
সকালের নাস্তা ৩০ টাকা
সি এন জি ভাড়া ১২০০ টাকা। তবে ৫ জন বসা যায়। তাই ভাড়াটা ভাগ হয়ে যাবে। জনপ্রতি ২৪০ টাকা
দুপুরের খাবার ১২০ টাকা
বিকালের নাস্তা ৫০ টাকা
শ্রীমঙ্গল টু ঢাকা বাস ভাড়া ৪০০ টাকা
সর্বমোট খরচ ১২৪০ টাকা। আর বাকিটা এক্সট্রা খরচ হিসেবে ধরে নিলাম। মোটকথা ১৫০০ টাকায়ই ট্যুর ভালোভাবে শেষ করা সম্ভব।

আরো পড়ুনঃ
    সাজেক ট্যুর
    টাংগুয়ার হাওর ভ্রমনঃ টাংগুয়ার হাওর, শিমুল বাগান, বারিক্কা টিলা, নিলাদ্রী লেক
    একা ভ্রমনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস

Comments