বিদেশ ভ্রমন! তা তো অনেক টাকার ব্যাপার।
প্রায় মানুষের মনেই এই কথাটি থাকে। কিন্তু আপনি জানেন কি যে আপনি যে টাকা দিয়ে সাজেক ঘুরতে যান সেই টাকা দিয়ে আমাদের পাশের দেশ ভারতের মেঘালয় থেকে ঘুরে আসা যায়। কি বিশ্বাস হচ্ছে না তো? তাহলে আপনার জন্যই এই পোস্টটি।
মেঘালয়ঃ
এটি আসলে ভারতের একটি রাজ্য যার রাজধানী হচ্ছে শিলং। আমরা সিলেট এর যত পর্যটন স্পট এ যাই না কেনো সেখানকার মূল আকর্ষন থাকে ভারতের সীমান্তে দাড়িয়ে থাকা পাহাড়সমূহ। ওই পাহাড়গুলো নিয়েই মেঘালয় ঘটিত। আর এতো পাহাড় থাকার জন্যই একে প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড ও বলা হয়ে থাকে। আসলেই এখানে আসলে আপনার ভালো লাগতে বাধ্য। প্রকৃতিকে লিখে বা ছবি তুলে তার সৌন্দর্য দেখানোর ক্ষমতা আমার নেই। আমি শুধু পারি তার সৌন্দর্য টুকু মনের মধ্যে গেথে নিতে। তাই আমার লেখা পরে আপনি কখনোই মেঘালয়ের সৌন্দর্য বুঝবেন না৷ কিন্তু একটা কথাই বলতে পারি মেঘালয় না ঘুরলে পাহাড় যে কি সুন্দর হতে পারে তা বুঝবেন না।
কখন যাবেন?
মেঘালয়ের আসল সৌন্দর্য হচ্ছে এর ঝরনাগুলো। তাই মেঘালয় আসলে বৃষ্টির সময়ই আসা উচিৎ। এতে আপনি ঝরনার আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। তবে অবশ্যই সাথে করে রেইনকোর্ট নিয়ে আসবেন।
কিভাবে যাবেন?
বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে সরাসরি চলে আসুন সিলেটে৷ কদমতলী বাস স্ট্যান্ডে নেমে CNG রিজার্ভ করে চলে যেতে পারেন তামাবিল বর্ডার। ভাড়া পড়বে ৬০০ -৭০০ টাকা। আবার আম্বরখানা হতেও তামাবিল পর্যন্ত যেতে পারবেন। একা থাকলে বাসস্ট্যান্ডে থেকে তামাবিলের লোকাল বাসে করে যাওয়া ভালো এতে খরচ কম হয়। তো তামাবিল বর্ডারে সব কাজ শেষ করে ওপারে চলে যাবেন। সেখান থেকে ট্যাক্সি করে শিলং চলে যেতে পারেন ভাড়া পড়বে ১০০০-১৫০০ রুপি। আর একা থাকলে লোকাল ট্যাক্সি করে চলে যাবেন। ভাড়া ২৫০-৩০০ রুপির বেশি হবে না। শিলংয়ে থেকেই আপনি প্রতিদিন অন্যান্য যায়গায় সাইট সিইং করতে পারবেন। ডলার বর্ডার ক্রস করেই ভাঙিয়ে নিবেন বাংলাদেশি ১০০ টাকায় ৮০-৮১ টাকা করে পাবেন। শুনেছি শিলংয়ে রেট খুবই কম দেয়। নিজেরা গাড়ি ভাড়া করে গেলে আর কিছু টাকা বেশি দিয়ে প্রথম দিনই কিছু সাইট সিইং করে যেতে পারেন।কারন উমিক্রাম ফলস, লিভিং রুট ব্রিজ, এশিয়াস ক্লিনেস্ট ভিলেজ এগুলো যাওয়ার পথেই পড়ে। আর লোকাল গাড়িতে করে গেলে সরাসরি শিলংয়ের পুলিশ বাজার পর্যন্ত চলে যান। কারন এসব পরদিন ও দেখতে পারবেন।
(বর্তমানে তামাবিল বর্ডারে ডলার এন্ডোর্সমেন্ট করে না নিয়ে গেলে বেশ ঝামেলা করে। এদের এখন আর ১০০-২০০ টাকায় পেট ভরে না। ডিরেক্ট ৫-৬০০ টাকা চেয়ে বসে। তাই পারলে ডলার এন্ডোর্সমেন্ট করে নিয়ে যাবেন। আর যদি ডলার নিয়েই লিগালি যান তাহলে এক টাকাও দিবেন না তাদের। আপনি লিগাল থাকলে তারা আপনাকে আটকাতে পারবে না। বর্তমানে অতিরিক্ত জ্বালায় এরা।)
কোথায় থাকবেনঃ
শিলংয়ে হোস্টেল তেমন চোখে পরে নি। তাছাড়া শিলংয়ে গেলে গ্রুপ করে যাওয়াই ভালো। তাহলে হোটেলে থাকলেও খরচটা ভাগাভাগি হয়ে যাবে। তবে অবশ্যই বাংলাদেশের থেকে অনেক কমেই হোটেল পাবেন। ৮০০ টাকা থেকে হোটেল ভাড়া শুরু তাদের৷ শুধু মেঘালয় ট্যুরে গেলে শিলংয়ে থাকলেই হবে। অন্য কোথাও হোটেল বুক করতে হবে না৷ চেষ্টা করবেন শিলং এর পুলিশ বাজারেই থাকার।
কি কি দেখবেন?
সিলেট থেকে শিলংয়ে আসতে আসতে বিকেল হয়ে যাবে। তাই সে দিনটা রেস্ট নিয়ে নিন। সন্ধ্যায় একটু বেড়িয়ে হাটাহাটি করে দেখতে পারেন তাদের বাজারটা। যদি একা ট্রাভেল করেন বা দুই-তিন জন ট্রাভেল করেন ও পার্সোনাল গাড়ি ভাড়া না করতে চান তাহলে সন্ধ্যায় পুলিশ বাজার থেকে মেঘালয় ট্যুরিজম এর অফিস খুজে বের করুন ও পরদিনের জন্য ট্যুর বুক করে নিন। আপনার দুইটা ট্যুর বুক করতে হবে। একটা শিলং সাইট সিইং এর জন্য আরেকটা চেরা পুঞ্জি সাইট সিইং এর জন্য। চেরাপুুঞ্জির জন্য ৩৫০ রুপি, শিলংয়ের জন্য ৩০০ রুপি ও ডাউকির জন্য ৫০০ রুপি ভাড়া নিবে জনপ্রতি। তাদের রুট ম্যাপটি অনেকটা এরকমঃ
শিলং ট্যুরিস্ট স্পট
- Lady Hydari Park
- Ward's Lake
- Cathedral Catholic Church
- Capt. Williamson Sangma State Museum
- Don Bosco Centre for Indigenous Cultures
- Golf Course
- Spread Eagle Falls
- Sweet Falls
- Elephant Falls
- Shillong peak
চেরাপুঞ্জি ট্যুরিস্ট স্পট
- Mawkdok / Dympep Valley View
- Sohra Market
- Rama Krishna Mission Museum
- Nohkalikai Waterfalls
- Riat Mawiew / The Grand Canyon of Cherrapunjee
- First Presbytarian Church, Tombs of Welsh Missionaries, Angelican Cemetery
- David Scott Memorial
- Eco-Park
- Sa-I-Mika Park
- Mawsmai Lighted Cave
- Nohsngithiang Waterfalls
- Thangkharang Park / Kynrem Waterfalls
- Khoh Ramhah / Motrop
- Dainthlen Waterfalls
তো দুুুই তিন দিন এভাবে শিলংয়েই থেকে শুধু ডে সাইট সিইং এর মাধ্যমে জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট গুলো কভার করতে পারবেন। আর যদি ৪ জনের গ্রুপ করে যান তাহলে গাড়ি ভাড়া করে আপনাদের মনমতো করে ঘুরতে পারবেন।
খরচঃ
আগেই বলেছি যে সাজেক যেতে যা টাকা লাগবে তা দিয়ে মেঘালয় ঘুরা সম্ভব। সিলেট থেকে ঢাকা যেতে খরচ লাগে ৫০০ টাকার কম। আর সিলেট থেকে জনপ্রতি ৭০-৮০ টাকায় তামাবিল চলে যেতে পারবেন। সবচেয়ে ভালো ৪ জনের গ্রুপ করে যেতে৷ এতে খরচ কম হবে। আর একা থাকলেও বড়জোর ১০০০-১৫০০ টাকা বেশি খরচ হবে। শিলংয়ে হোটেল ভাড়ার ধারণা আগেই দিয়েছি। আর খাবার খরচও বেশী নয়। ২০০ টাকার ভেতরই আপনার প্রতি দিনের ভালো খাবার হয়ে যাবে। ১০০ টাকার ভেতর তো ভেজ থালিই পাওয়া যায়। তবে শূকরের মাংস সবত্র থাকে তাই খেয়াল করে খাওয়া দাওয়া করবেন। আপনার একটা পাসপোর্ট আর ভিসা থাকলে ট্রাভেল ট্যাক্স সহই বড়জোর ৬ হাজার টাকা খরচ হবে পুরো ট্যুরে।
Comments
Post a Comment