ঘুরে এলাম সুনামগঞ্জের জনপ্রিয় জায়গা টাংগুয়ার হাওর, শিমুল বাগান, বারিক্কা টিলা ও নিলাদ্রী লেক থেকে।
হাওরকন্যা সুনামগঞ্জে এখন প্রায় ১২ মাসই পর্যটক থাকে। এখানে বর্ষাকালে যেমন হাওরে নৌকা ভাসিয়ে অতুল সমুদ্রের মতো ঢেউ এর ফিল নেওয়া যায় তেমনি শীতকালে হাজার হাজার নয় লাখ লাখ পাখির দেখা পাওয়া যায়। আর শিমুল ফুলের সিজনে অর্থাৎ ফাল্গুনের শুরুতে যদি শিমুল বাগান যান তাহলে এই চিত্র সারা জীবন মনে থাকবে। আবার একই সাথে যদি বারিক্কা টিলার উপর বিকেলবেলা ২ ঘন্টা সময় কাটান অথবা একটা রাত ক্যাম্প করেন তাহলে তাও ভূলবার নয়।
আমি শীতের সময় গিয়েছিলাম সেখানে। হটাৎ আমার বড়লোক্স ভাই এই টাংগুয়া যাওয়ার প্রস্তাব দিলো। তাই স্বাভাবিক ভাবেই ট্যুর আর বাজেট ট্যুর রইলো না৷ তাও চেষ্টা করব বাজেট ট্যুরের ইনফরমেশন দিতে।
"ঢাকা থেকে সরাসরি হানিফ, শ্যামলী, এনা সহ আরো অনেক বাসে সুনামগঞ্জ যাওয়া যায়। ভাড়া পরে বাসভেদে ৫০০-৭০০ টাকা। রাতের বাসে উঠলে সকাল ৬ টার দিকে পৌছে যাবেন সুনামগঞ্জ। "
আমরা সকাল ৬ টার দিকে মোটরসাইকেল যোগে রওয়ানা হই। আমাদের রুট ছিলো
তাই তখন আমার এই যায়গাটা এতো ভালো লাগে নি। তাই সেখানে তেমন বেশী সময় কাটাইনি। কয়েকটা ছবি তুলে নিয়ে রওয়ানা হয়ে গেলাম নিলাদ্রীর উদ্দ্যেশে। নিলাদ্রী পৌঁছাতে বেশি সময় লাগে নি। এই লেকটা পাথর কেটে কেটে তৈরী করা হয়েছে এবং এটা সম্পূর্ণ কৃত্তিম। যাবার আগে অনেকের কাছেই শুনেছি যে এই নিলাদ্রী লেককে নাকি বাংলার কাশ্মির বলা হয়।
সেখানে গিয়ে বুঝতে পারি আসলে কথাটা বাড়িয়ে বলে হয়েছে। তবে যথেষ্ট সুন্দর যায়গা। একেবারে কাছেই রয়েছে ভারতের বর্ডার।
এই ট্রিপের যেই যায়গায়ই গিয়েছি সেখানেই আমার কেনো জানিনা ক্যাম্প করার ইচ্ছে হয়েছে। কারন অসমতল পাহাড়ের মাঝে একটু সমতল যায়গা আর সেখান থেকে অসম্ভব সুন্দর ভিউ পাওয়া গেলে সেখানে ক্যাম্প করার ইচ্ছা যে কারোরই হতে বাধ্য। সেখান থেকেও বিদায় নিলাম এবং চলে গেলাম তাহিরপুরের নৌকা ঘাটে।
এই নৌকা ঘাট সম্পর্কে আগে কিছু তথ্য দিয়ে দেইঃ
তাহিরপুর শিমুল বাগান
তবে মোবাইল ক্যামেরা সাবধানে রাখবেন। পড়ে গেলে আর ফিরে পেতে হবে না। নৌকা আমাদেরকে ওয়াচ টাওয়ার পর্যন্ত নিয়ে গেল। শীতকাল হওয়ায় তখন পানি কম ছিলো ও ওয়াচ টাওয়ারের ওখানে শুকনো জমি পাওয়া গেছিলো। আমরা নৌকা থেকে নেমে ভেতর দিকে হাটা শুরু করি। প্রথমেই উঠি ওয়াচ টাওয়ারে। সেখানে থেকে অনেক ভালো ভিউ পাওয়া যায়। আকাশে মেঘ না থাকলে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়।
আগে ওয়াচ টাওয়ারেও পাখী আসতো কিন্তু পর্যটক দের কারনে এখন ওয়াচ টাওয়ার থেকে ২ কি মি দূরে পাখিরা থাকে। তাই আপনি দূর থেকেই দেখতে পারবেন অসংখ্য পাখির কলরব। তারপর সেখান থেকে নেমে আমরা একটা ছোট ডিঙি নৌকা ভাড়া করি ১০০ টাকা দিয়ে। একটা ছোট ছেলে চালাচ্ছিলো নৌকা। সে আমাদেরকে ওয়াচ টাওয়ার থেকে বেশ কিছুটা সামনে নিয়ে যায় পাখি দেখাবে বলে। কিন্তু পাখি ছিলো কম করেও ১ কিলো দূরে। পাখির দেখা না পেলেও সবচেয়ে সুন্দর যা লেগেছিলো তা হলো হাওরের জল। শীতকাল হওয়ায় হাওরের পানি ছিলো একেবারে শান্ত। আপনি একুরিয়ামের নিচে যে রকম লতা পাতা। দেখেন ঠিক সেই রকম সুন্দর সুন্দর জলজ উদ্ভিদ দেখবেন। দেখবেন পানির নিচে দিয়ে সাতরে চলা অসংখ্য মাছ। নৌকা থেকেই আপনি একেবারে নিচ পর্যন্ত দেখতে পারবেন।
আমি প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার নই। তাই ছবিতে এই দৃশ্যগুলো ফুটিয়ে তুলতে পারি নি। তবে কথা দিতে পারি যে আপনি চোখ ফেরাতে পারবেন না।
আমরা ডিঙিতে করে আবার ওয়াচ টাওয়ারে ফিরে আসি এবং আমদের নৌকায় উঠি। তারপর নৌকা আবার আগের যায়গায় চলে যায়। সেখানে আমাদের মোটরসাইকেল এর ড্রাইভার অপেক্ষা করছিল। সে আমাদের নিয়ে আরেকটা রেস্তুরাতে যায়। সেখানে আমরা আমাদের দুপুরের খাবার সারি। সেখানে রেস্তুরাগুলো তেমন একটা সুবিধের নয়। তারপর আমরা ইচ্ছে করেই একটু দেরী করি। সেই সময়ে একটু বাজারটা ঘুরে দেখি। আসলে উদ্দ্যেশ্য বাজার ঘুরা ছিলো না। উদ্দ্যেশ্য ছিলো পেটের খাবার হজম করা। কারন ভরা পেটে আবার যদি মোটরসাইকেলে উঠতাম তাহলে ঝাকুনিতে সব খাবার বেরিয়ে যেতো। তো বিকেলের দিকে আমরা আবার রওয়ানা হই ও বারিক্কা টিলা তে আসি।
এখান থেকে আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যগুলোর একটা দেখি। একবার কল্পনা করুন, আপনি একটা পাহারের কিনারায় দাঁড়িয়ে। ১০০-১৫০ ফুট নিচ দিয়ে বয়ে চলা অপরূপ সুন্দর যাদুকাটা নদী। যার পানি একেবারে স্বচ্ছ নীল। আর নদীর ওপারে বালুয়ারি। দূরে দাঁড়িয়ে থাকা পাহারগুলোয় মেঘ এসে ধাক্কা খাচ্ছে। এবং একই সাথে সূর্যাস্ত হচ্ছে। এই দৃশ্য ভোলার মতো না। তারপর আমরা বারিক্কা টিলা দেখা শেষ করে শহরের উদ্দ্যেশ্যে রওয়ানা হয়ে পরি এবং সন্ধ্যের মধ্যে ফিরে আসি।
- শিমুল বাগান
- নিলাদ্রী লেক
- নিলাদ্রী লেক থেকে তাহিরপুরের নৌকা ঘাট
- নৌকা নিয়ে টাঙ্গুয়া হাওর ঘুরাঘুরি
- ঘুরাঘুরি শেষে আবার সেই বাইকে করে বারিক্কা টিলা
- বারিক্কা টিলা থেকে আবার সুনামগঞ্জ
![]() |
ছবিঃ steemit |
তাই তখন আমার এই যায়গাটা এতো ভালো লাগে নি। তাই সেখানে তেমন বেশী সময় কাটাইনি। কয়েকটা ছবি তুলে নিয়ে রওয়ানা হয়ে গেলাম নিলাদ্রীর উদ্দ্যেশে। নিলাদ্রী পৌঁছাতে বেশি সময় লাগে নি। এই লেকটা পাথর কেটে কেটে তৈরী করা হয়েছে এবং এটা সম্পূর্ণ কৃত্তিম। যাবার আগে অনেকের কাছেই শুনেছি যে এই নিলাদ্রী লেককে নাকি বাংলার কাশ্মির বলা হয়।
![]() |
নিলাদ্রী লেক |
সেখানে গিয়ে বুঝতে পারি আসলে কথাটা বাড়িয়ে বলে হয়েছে। তবে যথেষ্ট সুন্দর যায়গা। একেবারে কাছেই রয়েছে ভারতের বর্ডার।
![]() |
ভারতের বর্ডার |
এই ট্রিপের যেই যায়গায়ই গিয়েছি সেখানেই আমার কেনো জানিনা ক্যাম্প করার ইচ্ছে হয়েছে। কারন অসমতল পাহাড়ের মাঝে একটু সমতল যায়গা আর সেখান থেকে অসম্ভব সুন্দর ভিউ পাওয়া গেলে সেখানে ক্যাম্প করার ইচ্ছা যে কারোরই হতে বাধ্য। সেখান থেকেও বিদায় নিলাম এবং চলে গেলাম তাহিরপুরের নৌকা ঘাটে।
এই নৌকা ঘাট সম্পর্কে আগে কিছু তথ্য দিয়ে দেইঃ
তাহিরপুর শিমুল বাগান
- নৌকা ভাড়া রিসেন্টলি ফিক্সড করা হয়েছে। তবে এখনো দামাদামী করতে হয়।
- একটা ছোট সাইজের নৌকায়ও ১০-১২ জন বসা যায় অনায়াসে।
- নৌকা ভাড়া ১২ জনের জন্য যা আমাদের ২ জনের জন্যও তাই ছিলো। ফলে অবশ্যই খরচ কমাতে হলে গ্রুপ করে যাবেন।
- যদি হাওরে রাত কাটাতে চান তাহলে থানায় মাঝিকে নিয়ে গিয়ে রিপোর্ট করে আসবেন। ১০০ টাকা লাগে থানায়।
- মাঝিকে সাথে নিয়েই বাজার করবেন। নৌকায় মাঝিই রান্না করে দিবে। এজন্য তাকে এক্সট্রা টাকা দিতে হবে।
- অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট ভাড়া করে নিবেন। ৫০-৭০ টাকা পার পারসন।
- নৌকায় সোলার প্যানেল থাকলে ভালো। নইলে ইউপিএস বাজার থেকে ভাড়া করে নিবেন।
- নৌকা ভাড়া করার সময় অবশ্যই আগে বাথরুম দেখে নিবেন।
- ছাতা/ক্যাপ ও সানস্ক্রিন নিয়ে যাবেন।
ভাড়ার তালিকা থেকে জানা যায়, নৌকার ধরনভেদে সর্বোচ্চ ২০ জন যাত্রী ৮ থেকে ১২ ঘণ্টার জন্য ৩ হাজার টাকা, ২ দিন ও ১ রাতের জন্য ৬ হাজার টাকা, ৩দিন ২ রাতের জন্য ৭ হাজার টাকা। সর্বোচ্চ ৩০ জন যাত্রীর জন্য নৌকা ৮ থেকে ১২ ঘণ্টার জন্য ৪ হাজার ৫০০ টাকা, ২ দিন ১ রাতের জন্য ৯ হাজার টাকা, ৩ দিন ২ রাতের জন্য ১০ হাজার টাকা ভাড়া গুণতে হবে।
তাছাড়া বড় নৌকা সর্বোচ্চ ৪০ জন যাত্রীর ধারণক্ষমতা সম্পন্ন নৌকায় ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা ৬ হাজার টাকা, ২ দিন ১ রাতের জন্য ১২ হাজার টাকা ও ৩ দিন ২ রাতের জন্য ভাড়া ১৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে প্রশাসন।
তবে মোবাইল ক্যামেরা সাবধানে রাখবেন। পড়ে গেলে আর ফিরে পেতে হবে না। নৌকা আমাদেরকে ওয়াচ টাওয়ার পর্যন্ত নিয়ে গেল। শীতকাল হওয়ায় তখন পানি কম ছিলো ও ওয়াচ টাওয়ারের ওখানে শুকনো জমি পাওয়া গেছিলো। আমরা নৌকা থেকে নেমে ভেতর দিকে হাটা শুরু করি। প্রথমেই উঠি ওয়াচ টাওয়ারে। সেখানে থেকে অনেক ভালো ভিউ পাওয়া যায়। আকাশে মেঘ না থাকলে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়।
![]() |
ওয়াচ টাওয়ার থেকে ভিউ |
আগে ওয়াচ টাওয়ারেও পাখী আসতো কিন্তু পর্যটক দের কারনে এখন ওয়াচ টাওয়ার থেকে ২ কি মি দূরে পাখিরা থাকে। তাই আপনি দূর থেকেই দেখতে পারবেন অসংখ্য পাখির কলরব। তারপর সেখান থেকে নেমে আমরা একটা ছোট ডিঙি নৌকা ভাড়া করি ১০০ টাকা দিয়ে। একটা ছোট ছেলে চালাচ্ছিলো নৌকা। সে আমাদেরকে ওয়াচ টাওয়ার থেকে বেশ কিছুটা সামনে নিয়ে যায় পাখি দেখাবে বলে। কিন্তু পাখি ছিলো কম করেও ১ কিলো দূরে। পাখির দেখা না পেলেও সবচেয়ে সুন্দর যা লেগেছিলো তা হলো হাওরের জল। শীতকাল হওয়ায় হাওরের পানি ছিলো একেবারে শান্ত। আপনি একুরিয়ামের নিচে যে রকম লতা পাতা। দেখেন ঠিক সেই রকম সুন্দর সুন্দর জলজ উদ্ভিদ দেখবেন। দেখবেন পানির নিচে দিয়ে সাতরে চলা অসংখ্য মাছ। নৌকা থেকেই আপনি একেবারে নিচ পর্যন্ত দেখতে পারবেন।
আমি প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার নই। তাই ছবিতে এই দৃশ্যগুলো ফুটিয়ে তুলতে পারি নি। তবে কথা দিতে পারি যে আপনি চোখ ফেরাতে পারবেন না।
আমরা ডিঙিতে করে আবার ওয়াচ টাওয়ারে ফিরে আসি এবং আমদের নৌকায় উঠি। তারপর নৌকা আবার আগের যায়গায় চলে যায়। সেখানে আমাদের মোটরসাইকেল এর ড্রাইভার অপেক্ষা করছিল। সে আমাদের নিয়ে আরেকটা রেস্তুরাতে যায়। সেখানে আমরা আমাদের দুপুরের খাবার সারি। সেখানে রেস্তুরাগুলো তেমন একটা সুবিধের নয়। তারপর আমরা ইচ্ছে করেই একটু দেরী করি। সেই সময়ে একটু বাজারটা ঘুরে দেখি। আসলে উদ্দ্যেশ্য বাজার ঘুরা ছিলো না। উদ্দ্যেশ্য ছিলো পেটের খাবার হজম করা। কারন ভরা পেটে আবার যদি মোটরসাইকেলে উঠতাম তাহলে ঝাকুনিতে সব খাবার বেরিয়ে যেতো। তো বিকেলের দিকে আমরা আবার রওয়ানা হই ও বারিক্কা টিলা তে আসি।
এখান থেকে আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যগুলোর একটা দেখি। একবার কল্পনা করুন, আপনি একটা পাহারের কিনারায় দাঁড়িয়ে। ১০০-১৫০ ফুট নিচ দিয়ে বয়ে চলা অপরূপ সুন্দর যাদুকাটা নদী। যার পানি একেবারে স্বচ্ছ নীল। আর নদীর ওপারে বালুয়ারি। দূরে দাঁড়িয়ে থাকা পাহারগুলোয় মেঘ এসে ধাক্কা খাচ্ছে। এবং একই সাথে সূর্যাস্ত হচ্ছে। এই দৃশ্য ভোলার মতো না। তারপর আমরা বারিক্কা টিলা দেখা শেষ করে শহরের উদ্দ্যেশ্যে রওয়ানা হয়ে পরি এবং সন্ধ্যের মধ্যে ফিরে আসি।
![]() |
এটা দিয়েই শেষ হয় আমাদের টাংগুয়ার হাওর ট্যুর যাদুকাটা নদীতে সূর্যাস্ত |
- টাঙ্গুয়ায় গিয়ে উচ্চস্বরে মাইক স্পিকার বাজাবেন না।
- ওয়াচটাওয়ারে গিয়ে বিরিয়ানির প্যাকেট ফেলে আসবেন না। একটা বড় পলিথিনের ব্যাগ সাথে ক্যারী করবেন।
- আশপাশ পরিষ্কার রাখবেন।
আরো পড়ুনঃ
Comments
Post a Comment