শিমলা- মানালি ট্যুর প্লানঃ কিভাবে যাবেন, খরচাপাতি সহ সব।


প্রায় সব বাঙালীরই মনে বরফ দেখার ইচ্ছা রয়েছে। কারণ বাংলাদেশে বরফ দেখতে পাওয়া যায় না। তবে মনে বরফ দেখার ইচ্ছা থাকলে যেতে হবে না ইউরোপ আমেরিকা। পাশের দেশ ভারতেই খুব কম খরচে বরফ দেখা যায়। বরফ দেখার জন্য শিমলা - মানালী অন্যতম। হিমাচল প্রদেশের রাজধানী হচ্ছে শিমলা এবং মানালি আরেকটি শহর। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর প্রচুর পর্যটক শিমলা মানালী ঘুরতে আসেন। এখানে খরচ খুবই কম হয়। তাই আজই আপনার ট্যুরটি সুন্দর করে গুছিয়ে ফেলুন।

কখন যাবেনঃ

বরফ দেখতে হলে আপনাকে জানুয়ারির শেষের দিক থেকে ফেব্রুয়ারীর শেষ পর্যন্ত এই মাঝামাঝি সময়টাতে যেতে হবে। এই সময়টাতে প্রচুর স্নোফল হয়। তখন তাপমাত্রা থাকবে মাইনাস এর ঘরে। তবে মার্চ-এপ্রিল এ গেলে স্নোফল না পেলেও বরফ পাবেন নিশ্চিত। কিন্তু এই সময়টাতে পিক সিজন চলে তাই খরচ হবে বেশি। আর এসব কিছুই না চাইলে মে থেকে সেপ্টেম্বর মাসে চলে যান। শুধু পাহাড়ই দেখতে পাবেন। তবে এই সময়টাতেই মানালির সবুজ রুপ দেখা যায়। তাই নেহাতই খারাপ না এই সময়টা।
(মানালির রোহতাং পাস থেকে সারা বছরই বরফ দেখা যায়। তাই অফ সিজনে গেলে রোহতাং পাস যাবেন। আর শীতের সময় বরফ পড়ে প্রায়ই রোহতাং পাসের রাস্তা বন্ধ থাকে। তাই শীতের সময় ভাগ্য ভালো না হলে রোহতাং পাস যেতে পারবেন না। তবে রোহতাং পাসের ফিল সোলাং ভ্যালিতে নিতে পারবেন)       

কতদিনের প্লান করবেনঃ

এটা সম্পূর্ণ আপনার ব্যাপার। তাও নিচে একটা আমার মন মতো প্লান দিলাম। তবে নিজে প্লান করে যাওয়া ভালো। মানালিতে ২ দিন আর শিমলাতে ২ দিন হাতে সময় রেখে প্লান করবেন। নইলে সবটা দেখা হবে না। আর ট্যুর প্লান এমন ভাবে করবেন যাতে ট্রেন লেট বা গাড়ি ১২-১৫ ঘন্টা লেট হলে বিপদে না পরেন। কারন আমি প্রথম বার বাবার সাথে যখন ইন্ডিয়া যাই তখন গয়া থেকে কলকাতা যেতে ১৬ ঘন্টা লেট হয়েছিলো। ফলে আমরা কলকাতা ভালোভাবে দেখতেই পারি নি। তাই সবকিছু মাথায় রেখে প্লান করবেন

কিভাবে যাবেনঃ

শিমলা মানালী যাওয়ার জন্য আপনার প্রথমেই যেতে হবে কলকাতা। তারপর দুই ভাবে শিমলা মানালি ট্যুর দেওয়া যায়।

কলকাতা - কালকা - শিমলা - মানালি - দিল্লি - কলকাতা
কলকাতা - দিল্লি - মানালি - শিমলা - দিল্লি - কলকাতা

আমি এই পোস্টে প্রথম রুট সম্পর্কে লিখছি। ২য় পোস্টে ২য় রুট নিয়ে লিখবো।
২য় পোস্টের লিংকঃ
কলকাতা-দিল্লি-মানালি-শিমলা-দিল্লি-কলকাতা ট্যুর প্লান
আপনাদের সুবিধার্থে মোটামোটি একটা ট্যুর প্লান দিয়ে দিলাম। আপনার প্রয়োজন অনুসারে সংশোধন করে নিবেন

কলকাতা, কালকা, শিমলা, মানালি, দিল্লি, কলকাতা
     ০ দিনঃ ঢাকা টু বেনাপোল
     ১ম দিনঃ বেনাপোল টু কলকাতা। (রাতে কলকাতা স্টে)
     ২য় দিনঃ কলকাতা টু কালকা (রাতে ট্রেনে স্টে)
     ৩য় দিনঃ সারা দিন রাত ট্রেনে স্টে
     ৪র্থ দিনঃ কালকা টু শিমলা
     ৫ম দিনঃ শিমলা সাইট সিইং
     ৬ষ্ঠ দিনঃ শিমলা টু মানালি
     ৭ম-৮ম দিনঃ মানালি সাইট সিইং, রাতে দিল্লির বাস
     ৯ম দিনঃঃ দিল্লি টু কলকাতা
     ১০ দিনঃ রাতে কলকাতা স্টে
     ১১ দিনঃ কলকাতা টু বেনাপোল, বেনাপোল টু ঢাকা

ঢাকা থেকে কলকাতাঃ 

কলকাতা যাওয়ার জন্য প্রথমে ঢাকা থেকে বেনাপোল গামী বাসে উঠবেন। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে প্রায় সব বাস সার্ভিসই বেনাপোলের উদ্দ্যেশে বাস ছাড়ে। ভাড়া নন এসি ৫৫০-৭০০ টাকার মধ্যে আর এসি বাস ১১০০ টাকা থেকে শুরু। সন্ধ্যার পর বাস ছেড়ে পরদিন ভোরে বর্ডারে পৌঁছায়। সেখানে নেমে বর্ডার পার হয়ে নিন। বর্ডার সাধারণত সকাল ৬টায় খোলে। তাই সকাল সকাল গেলে ভালো। ওপারে পৌঁছে একটা অটোতে উঠে যান। বনগাঁও স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া নিবে ১০ টাকার মতো। বনগাও থেকে কিছু সময় পর পরই কলকাতার উদ্দ্যেশে ট্রেন লোকাল ট্রেন ছাড়ে। ভাড়া ২০ টাকার মতো। ট্রেন শিয়ালদাহ পর্যন্ত যায়। সেখান থেকে নেমে ট্যাক্সি অথবা উবার এ করে আপনি হাওড়া স্টেশনে চলে আসতে পারেন। আবার মেট্রোতে করেও আসতে পারেন। এতে খরচ অনেক কম হবে। এজন্য দমদম জং এ নেমে পড়ুন ( শিয়ালদাহ এর আগের স্টেশন)। তারপর সেখান থেকে মেট্রোতে করে পার্ক স্ট্রিট। তারপর পার্কস্ট্রিট থেকে হাওড়া স্টেশন। হাওড়া স্টেশন এর লকারে ব্যাগ রেখে আপনি কলকাতা শহরটা ঘুরে দেখতে পারেন।

তাছাড়াও ঢাকা থেকে প্রতিদিন সরাসরি কলকাতার ফ্লাইটও রয়েছে।
একবার চিন্তা করুন এই রোডটা বরফে ঢাকা থাকলে কি রকম দেখতে হবে?


 মানালির প্রবেশপথ 

কলকাতা, কালকা, শিমলা, মানালি, দিল্লি, কলকাতা

এই রুট ফলো করেই বেশির ভাগ মানুষ যাতায়াত করেন৷ কারন হচ্ছে ছবির মতো সুন্দর টয় ট্রেন।  এই টয় ট্রেনে চড়ে বরফের মধ্য দিয়ে যাওয়ার আনন্দই আলাদা। আপনি সহজেই কলকাতা থেকে কালকা ট্রেনে আসতে পারেন। কলকাতা টু কালকা ট্রেন ভাড়াঃ

স্লিপার ক্লাসঃ ৬৮০ রুপি
3 tire: ১৮০৫ রুপি
2 tire: ২৬২৫ রুপি
1s class: ৪৫২০ রুপি

ট্রেনের টিকেট আপনি দেশে থেকেই কাটতে পারবেন যদি আপনার একটা ডুয়েল কারেন্সী কার্ড থাকে। আর না থাকলে আপনি যেকোনো ট্রাভেল এজেন্ট থেকে টিকেট কাটতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রাইজ একটু বেশি পরবে। আর এভাবেও টিকেট কাটতে না পারলে যেদিন কলকাতা যাবেন সেদিনই হাওড়া না গিয়ে ফেয়ারলী প্লেস গিয়ে ফরেইনারদের জন্য বরাদ্দ্য সিট বুক করতে পারেন। এক্ষেত্রেও টাকা বেশি লাগবে ও ঐ দিনের টিকেট নাও পেতে পারেন। তখন আপনার কলকাতা একরাত থাকা লাগতে পারে। তাই এতো ঝামেলা না করে দেশে থেকেই টিকেট কেটে যাওয়া ভালো। আর একটা ডুয়েল কারেন্সী কার্ড থাকলে তো আর কোনো কথাই নেই। নিজের টিকেট নিজেই কোনো অতিরিক্ত টাকা ছাড়া কাটতে পারবেন।

জেনে নিন কিভাবে ডুয়েল কারেন্সী কার্ড করবেন 

কালকা থেকে শিমলাঃ

টয় ট্রেনের ভাড়া ২৬০ রুপির মতো। টয় ট্রেনের টিকেট কেটে উঠে পরুন শিমলার উদ্দ্যেশে। ৫ ঘন্টা লাগবে শিমলা যেতে। তবে যদি বরফের সিজনে ভ্রমন করেন তাহলে টয় ট্রেনে এক অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য আপনার জন্য অপেক্ষা করবে।

তারপর শিমলা ঘুরা শেষে মানালি বাসে চলে যাবেন। শিমলার লক্কর বাজার বাস স্ট্যান্ড থেকে মানালি যাওয়ার বাস পেয়ে যাবেন। ভাড়া পড়বে ৩৬০ টাকা নন এসি আর ৫০০-১০০০ টাকা এসি(কোয়ালিটি ভেদে)। তারপর মানালি ঘুরা শেষে মানালি থেকে দিল্লি ও দিল্লি থেকে ট্রেনে কলকাতা।

কোথায় থাকবেনঃ

প্রচুর হোটেল রয়েছে৷ তাই Booking.com থেকে বুক করে নিন। তাছাড়া সলো ট্রাভেলার্স দের জন্য রয়েছে ডর্ম বা হোস্টেল। এখানে আপনি ৫০০ টাকার ভেতরেই রুম পেয়ে যাবেন। Zostel নামক হোস্টেলটিও দেখতে পারেন। 

মানালিতে কি কি দেখবেনঃ

১ম দিন যেহেতু জার্নি করে আসবেন তাই দুপুর পর্যন্ত হোটেলে রেস্ট নিয়ে বিকেলে বেড়িয়ে পড়ুন। Hidimba Temple টি দেখতে পারেন। তাছাড়া ঐ দিন কাছাকাছিই থাকুন। আর পরদিনের রোহতাং পাসে যাওয়ার জন্য গাড়ি ঠিক করে রাখুন। এখানে একটা টিপস শেয়ার করব। যদি আপনি একা থাকেন অথবা ২-৩ জনের গ্রুপ নিয়ে যান তাহলে তো আর একটা গাড়ি ভাড়া করতে পারবেন না। বা পারলেও খরচ বেশি পড়বে। আপনারা মানালি এর মল রোড এ যে বাস কাউন্টার আছে সেখানে গিয়ে হিমাচল ট্যুরিসম এর কাউন্টার খুজে বের করুন। সেখান থেকে পরদিনের বাসের টিকেট কাটুন আর রোহতাং পাসে যাওয়ার পারমিশন নিয়ে নিন। আপনি চাইলে দেশে থেকেই পারমিশন নিতে পারবেন। পারমিশন নেওয়ার জন্য নিচের লিংকটিতে ক্লিক করুন
rohtangpermits.nic.in
তো বাসের টিকেট ও দুই রকম আছে। একটা HRTC বাস আরেকটা HPTDC বাস। HRTC বাসটা নরমাল কোয়ালিটির বাস৷ ভাড়া পরবে ৬০-১০০ রুপি। আর HPTDC বাস হচ্ছে লাক্সারী বাস (সম্পূর্ণ ইলেক্ট্রিক) এবং ভাড়া ৩০০ রুপি। রিটার্ন ভাড়া পরবে ৬০০ রুপি। HPTDC বাসের টিকেট অনলাইনে বুকিং দেওয়া যায় ও আমার মতে এটা অনেক আগেই বুকিং দিয়ে রাখা ভালো। বুকিং সাইটঃ
https://online.hrtchp.com/oprs-web/guest/home.do?h=1

হ্যাঁ, এইটাই রোহতাং পাস যাওয়ার রাস্তা 
Hidimba Temple

শিমলাতে কি কি দেখবেনঃ

সেম ভাবে ১ম দিন টা রাখুন লোকাল সাইট সিইং এর জন্য আর পরের দিনটা রাখুন কুফরি যাওয়ার জন্য। একটা গাড়ি ভাড়া করুন ও শিমলার ফেমাস প্লেস গুলা কভার করতে পারেন।
এটাই সেই বিখ্যাত শিমলা শহর৷ যা বরফে ঢেকে গেলে দেখতে লাগে অনেকটা এইরকম 


  •  দ্যা রিজ (The Ridge)
  • ক্রাইস্ট চার্চ (Christ Church)
  • সামার হিল (Summer Hill)
  • ভ্যাইসরিগেল লজ (Viceregal Lodge)
  • সেন্ট মাইকেল ক্যাথিড্রাল (ST. Michael’s Cathedral)
  • হিমাচল ষ্টেট মিউজিয়াম (Himachal State Museum)


খরচঃ

এটা সম্পূর্ণ আপনার উপর নির্ভরশীল। আমার প্লান মতো ঘুরলে ১৫০০০ রুপি দিয়েই ঘুরা সম্ভব। তাই আপনারা এখান থেকে একটা ধারনা নিয়ে যান ও নিজের একটা বাজেট তৈরি করুন। আমি কম খেলে তো আর আপনার ও কম খেতে হবে না। তাই নিজের বাজেট ও প্লান নিজে করাই ভালো। অন্যদের থেকে শুধু ধারনা নিবেন। আপনি হয়তো এর থেকে কমেই ঘুরতে পারবেন।

আর কোনো কিছু জানার থাকলে কমেন্টে জিজ্ঞেস করতে পারেন। ধন্যবাদ।    

আরো পড়ুনঃ
থাইল্যান্ড ট্যুর প্লান 


Comments