কাউচসার্ফিংঃ হোটেল খরচ কমানোর সেরা উপায় (১)


কোনো ট্রিপ প্লান করলে আমাদের পুরো বাজেটের একটি মূল অংশ চলে যায় প্লেন ভাড়া এবং হোটেল ভাড়ার পেছনে। প্লেন ভাড়া যথাসম্ভব কমিয়ে আনার কিছু টিপস আগেই দিয়েছি। চাইলে প্লেন ভাড়া কমানোর উপায়টি পড়ে নিতে পারেন। এই পর্বে আলোচনা করব হোটেল ভাড়া নিয়ে।
পৃথিবীর বড় বড় শহর বা পপুলার ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন গুলোতে হোটেল ভাড়ার একটা ধারনা নিশ্চই আছে? যেমন আপনি মালদ্বীপ এর কথাই ভাবুন। একেবারে লো কোয়ালিটির হোটেলের জন্যও খরচ হবে ৫০-৬০ ডলার পার নাইট। যেই হোটেল থেকে দেখতে পারবেন না সমুদ্র। হোস্টেলের জন্যই খরচ হবে প্রায় ৩০ ডলার। তারপর ইউরোপের বড় একটা শহরে একেবারে নিম্নমানের হোটেলও USD80-90 এর কমে পাবেন না। কিন্তু কেমন হয় যদি আপনি ফ্রিতেই সেখানকার কোনো লোকাল মানুষের সাথে তার বাসায় থাকলেন। একই সাথে তার আত্বীয়তাও পেলেন। এমনই সুবিধা পাবেন Couchsurfing নামের এই এপসটিতে। এখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের নিজেদের রেজিষ্ট্রেশন করায় মানুষকে নিজেদের বাসায় বিনামূল্যে থাকতে দেওয়ার জন্য। ভাবছেন এ আবার কেমন কথা? কিন্তু এটাই সত্যি। বাংলাদেশে কাউচসার্ফিং এতো জনপ্রিয় না হলেও বিশ্বের প্রায় সব ট্রাভেলার্স দের কাছে এটা জনপ্রিয়। তবে বর্তমানে বাংলাদেশেও এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। আপনি এপসটি ইন্সটল করার পর বাংলাদেশের কিছু যায়গা লিখে সার্চ দিয়ে নিজেই দেখে নিয়েন যে কতো মানুষ আপনাকে তাদের ঘরে যায়গা দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। 
[ অন্যের বাসায় থাকার নিরাপত্তা নিয়ে এই পর্বের শেষে আলোচনা করব]  

আসুন জেনে নেই কিভাবে অপেন করবেন কাউচসার্ফিং একাউন্ট।

প্রথমে Play Store এ গিয়ে Couchsurfing লিখে সার্চ দিন।           
এখান থেকে এপসটি ইনস্টল করুন। তারপর এপে প্রবেশ করলে অপশন পাবেন নতুন একাউন্ট খোলার। 
এখানে জয়েন কাউচসার্ফিং অপশন পাবেন। সেখানে ক্লিক করুন।
তারপর এইরকম একটা পেজ অপেন হবে৷ সেখানে নিজের ডিটেইলস দিন। সবসময় চেষ্টা করবে সম্পূর্ণ সত্য ডিটেইলস দিতে।
 তারপর এইখানে নিজের ইমেইল এড্রেস দিন ও নতুন একটি পাসওয়ার্ড দিন। দিয়ে I agree তে টিক চিহ্ন দিন এবং একাউন্ট ক্রিয়েট করুন। 
ব্যাস আপনার একাউন্ট খোলা হয়ে গেলো। কিন্তু মাত্র এই কয়টা তথ্য দিয়ে আপনি কারো বাসায় থাকতে পারেন না। তাই আপনার প্রোফাইল সম্পূর্ণ করতে হবে। এবার আপনি একাউন্ট সেটিংসে যান এবং আপনার সব তথ্য দিন। আপনার কয়েকটি ছবি এড করুন। আপনার পছন্দ সম্পর্কে এবং আপনার সম্পর্কে লিখুন। আপনার ইমেইলে যান এবং সেখান থেকে পাওয়া লিংকে ক্লিক করে ভেরিফাই করুন।
এই সবগুলো অপশনে সব তথ্য দিয়ে মিনিমাম ২টি ছবি আপলোড দিলে আপনার প্রোফাইল ৭০% এর মতো কম্পলিট হবে। এবার আপনি অন্যের বাসায় থাকার জন্য প্রস্তুত। এপসেই সার্চ অপশন পাবেন। সেখানে আপনি কোন যায়গায় থাকতে চান সেই যায়গা সার্চ করুন।
এখানে আমি ঢাকা লিখে সার্চ দিয়েছি এবং ৩টা অপশন এসেছে। 
১। হোস্ট
২। ট্রাভেলার্স
৩। ইভেন্ট
এখানে হোস্ট মানে হচ্ছে যাদের বাসায় আপনি থাকতে পারবেন। ট্রাভেলার মানে হচ্ছে যারা রিসেন্টলি ঢাকা ভিসিট করবেন। আর ইভেন্ট মানে তো বুঝেনই। এখন হোস্ট এ ক্লিক করলে অনেক বড় একটি লিস্ট পাবেন। সেখান থেকে আপনি হোস্টদের প্রোফাইল চেক করে যাকে ভালো লাগবে তাকে হোস্ট করার জন্য রিকোয়েস্ট পাঠাতে পারবেন। তারও যদি আপনাকে ভালো লাগে তাহলে সে আপনার রিকোয়েস্ট এপসেক্ট করবে। তারপর নির্ধারিত দিনে আপনি তার সাথে যোগাযোগ করে তার বাসায় উঠবেন। 
আর ট্রাভেলার্স এ ক্লিক করলে আপনি আরেকটি লিস্ট পাবেন যেখানে রিসেন্টলি যারা ঢাকা বেড়াতে যাবে তাদের লিস্ট। আপনি তাদের সাথে যোগাযোগ করে একসাথে ঘুরতে পারেন।   

কিছু টিপসঃ

১। সবসময় চেষ্টা করবেন ভালো একটা প্রোফাইল তৈরি করতে৷ আপনার সম্পর্কে যত স্পষ্ট তথ্য থাকবে তত আপনার হোস্ট পেতে সুবিধা হবে। কারন একজন হোস্ট ইচ্ছে করলে আপনাকে তার বাসায় নাও রাখতে পারে৷ কারন এটা তার সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছা। তাই সে চাইবে একজন ভালো ট্রাভেলার রাখতে। তাই আপনার সম্পর্কে একটু সন্দেহ হলেই আপনি হোস্ট আর নাও পেতে পারেন। আপনার বেশ কয়েকটি ছবি দিবেন প্রোফাইলে।

২। হোস্ট আপনার রিকোয়েস্ট রাখতে না পারলে খারাপ কিছু মন্তব্য করবেন না। এতে সে যদি আপনাকে রিপোর্ট করে তাহলে প্রবলেমে পরবেন। যেহেতু এটা রাতের বেলা অন্যের বাসায় থাকার এবং অন্যকে নিজের বাসায় রাখার একটা কেস সেখানে উভয়পক্ষই চাইবে তার হোস্ট বা ট্রাভেলার যাতে একজন ভালো মানুষ হয়। তাই নিজের ইমেজ নষ্ট হয় এমন কাজ করবেন না।

৩। হোস্টের বাসায় থাকার পর তার ভালো বা খারাপ যাই হোক না কেন রিভিউ দিয়েন। এতে অন্যদের সুবিধা হবে।

৪। এই এপসটি ২০০৩ সালে যাত্রা শুরু করে। এতো বছরের ভেতর নিরাপত্তা জনিত দূর্ঘটনার হার একেবারেই নগন্য। কাজেই আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। কারন প্রত্যেকেরই ইনফরমেশন তাদের কাছে থাকে ফলে খারাপ কিছু ঘটার আশংকা নেই। তবে সাবধান থাকা ভালো। চেষ্টা করবেন ভেরিফাইড মেম্বারদের নিজের হোস্ট হিসেবে নিতে।    

আইডি ভেরিফাইঃঃ

এবার আসি টাকা পয়সার বিষয়ে। ২০০৩ সালে যাত্রা শুরু করা এই প্রতিষ্ঠান  প্রথমে অমূনাফাভোগী প্রতিষ্ঠান থাকলে পরবর্তীতে ২০০৮ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের মূনাফাভোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রকাশ করে। ফলে তারা নতুন ফিচার চালু করে যা ভেরিফাই নামে পরিচিত। আইডি ভেরিফাই এর জন্য তারা ৬০ ডলার এককালীন চার্জ করে এবং পরবর্তীকালে কোনো ফি দিতে হয় না। ভেরিফাই না করেও আপনি এই এপসটি চালাতে পারবেন। এখানে পার্থক্য শুধু ২টি।
১। ভেরিফাই করলে আপনার হোস্ট পাবার চান্স ৯৯%
আর না করলে ৮০%
২। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হচ্ছে আপনি আনভেরিফাইড আইডি দিয়ে মাত্র ১০টি মেসেজ পাঠাতে পারবেন। যা ভেরিফাইড আইডির ক্ষেত্রে আনলিমিটেড।

[আমার টিপস হলো আপনার about you অপশনে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া আইডি উল্লেখ করে দিবেন এবং লিখে দিবেন যে সরাসরি আপনার সাথে সোশ্যাল মিডিয়াতে যোগাযোগ করতে। এতে আপনার মেসেজ কম খরচ হবে। কাউকে পারতপক্ষে মেসেজ দিবেন না। এভাবে মেসেজ বাচিয়ে চললে আপনি ১০ টা মেসেজ দিয়ে কমপক্ষে ১০ জনের বাসায় থাকতে পারবেন। তারপর আপনার উচিত ভেরিফাই করিয়ে নেওয়া। কারন আপনি বড় কোনো হোটেলের এক রাতের ভাড়া দিয়ে বাকি সারা জীবন ফ্রিতে থাকার লাইসেন্স পেয়ে যাবেন।]      

হোস্টদের সাথে ব্যবহারঃঃ

 এখানে যেহেতু কোনো টাকা পয়সার বিষয় নেই তাই আপনার তাদেরকে কোনো টাকা পয়সা দিতে হবে না।  প্রায় সব হোস্টই আন্তরিক। আমি এমনও হোস্ট পেয়েছি যার নিজের হোটেল আছে। সে তার হোটেলের ৩২ টি রুমের মধ্যে ৩০ টি ভাড়া দেয় এবং বাকী ২ টা কাউচসার্ফারের জন্য বরাদ্দ। সেখানে হোটেলের সেম সুবিধা, নিজের রুম, টিভি, এসি সবকিছু।  কিন্তু কোনো টাকা লাগে না। তাই বুঝেন ব্যাপারটা। তবে সবাই তাদের হোস্টের জন্য কিছু গিফট নিয়ে যায় দেশ থেকে। অথবা তাদের নিয়ে রাতে কোনো রেস্টুরেন্টে ডিনার করে। কেউ আবার তাদের বাসাটা সুন্দর করে গুছিয়ে দেয়, কেউ নতুন রেসিপি তৈরি করে খাওয়ায়। আবার কেউ শুধু গল্পগুজব করে এবং আসার সময় ফ্রিজে একটা ধন্যবাদ লিখা কার্ড রেখে আসে। মেইন কথা হচ্ছে কেউই আপনার কাছ থেকে কিছু আশা করবে না। আপনার নিজের সামর্থ অনুযায়ী কিছু একটা করে আসবেন। এতে হোস্টরা খুশি হবেন।

আপাতত আর কোনো কিছু মনে পড়ছে না। তাই আর কোনো কিছু জানার থাকলে কমেন্টে প্রশ্ন করতে পারেন।      

Comments