গ্যাংটক
গ্যাংটক হচ্ছে ভারতের সিকিম রাজ্যের সবথেকে বড় শহর ও রাজধানী। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গ্যাংটকের উচ্চতা ১৪৩৭ মিটার। অসীম সৌন্দর্যের এই শহরের
সৌন্দর্য লিখে প্রকাশ করা প্রায় অসম্ভব। এই শহরের বাসিন্দা প্রায় ৩০ হাজার। হিমালয় পর্বতমালার সুউচ্চ শিখরগুলির মাখখানে মনোরম ও আরামদায়ক পরিবেশে গ্যাংটকের অবস্থান। এই মেঘ ও বরফের বাড়িতে ঘুরে আসার সবথেকে ভালো উপায় হচ্ছে গ্যাংটককে কেন্দ্র করে ঘুরা। এই শহর মানেই বিশাল বিশাল পাহাড় আর বরফ। মাইনাস তাপমাত্রাতে গ্যাংটকে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। বৈচিত্রময় উদ্ভিদ, সাথে বিচিত্র প্রানিকূল মিলিয়ে গ্যাংটক হয়ে উঠেছে প্রকৃতিপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য। তাছাড়াও এখানে দেখা পাবেন অনেক হ্রদ ও ঝর্নার।
যে পোর্ট দিয়েই যান আপনাকে শিলিগুড়ি হয়েই গ্যাংটক যেতে হবে। শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক ১১৫.৭ কিমি। যদি চ্যাংড়াবান্ধা/ বুড়িমারি পোর্ট দিয়ে যান তাহলে চ্যাংড়াবান্ধা/ বুড়িমারি পোর্ট থেকে শিলিগুড়ি ৮৫.৫ কিমি।যদি বাংলাবান্ধা/ ফুলবাড়ি পোর্ট দিয়ে যান তাহলে বাংলাবান্ধা/ ফুলবাড়ি থেকে শিলিগুড়ি ১২ কিমি।এই জন্য বাংলাবান্ধা/ ফুলবাড়ি পোর্ট দিয়ে যাওয়াটা সুবিধাজনক।
গ্যাংটকের বাইরে সুন্দর একটা যায়গা হচ্ছে এই ছাঙ্গু লেক। (বাকিগুলো লোকাল সাইটসিইং এর মধ্যে পড়ে।) এই লেক গ্যাংটক থেকে ৩৮ কি মি দূরে ১২,৪০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। শীত কালে পুরো লেকটি বরফে ঢাকা থাকে। এখানে আসা প্রায় পর্যটকই একবার হলেও ইয়াক এর পিঠে চড়েন। তাছাড়া ছাঙ্গু লেক গিয়ে অবশ্যই রোপওয়েতে উঠবেন। ৩২৫ রুপি লাগে। এতে করে ছাঙ্গু লেক ঘুরা সার্থক হয়।
আর লোকাল সাইট সিইং এর মধ্যে আছে
প্যাকেজ এ যা থাকবেঃ
তো নর্থ সিকিম ঘুরা শেষ করে আবার গ্যাংটকে আসবেন। সেইদিন হোটেলে থেকে পরদিন ছাঙ্গু লেক চলে যেতে পারেন।
পরদিন ছাঙ্গুলেক ঘুরা শেষ করে হোটেলে থেকে যাবেন। এবং এর পরদিন রওয়ানা হয়ে যেতে পারেন বর্ডারের উদ্দ্যেশে। তবে অনেকেই গ্যাংটক যাওয়া অথবা ফেরার সময় একসাথে দার্জিলিং ট্যুর ও দিয়ে থাকেন। কারন দার্জিলিং এর পাশ ঘেষেই যেতে হয় সেখানে। তাই প্রায় একই খরচে দার্জিলিং ও ঘুরা হয়ে যায়। তবে অন্য কোনো পোস্ট এ হয়তো দার্জিলিং নিয়ে লিখবো৷ আজ এতোটুকুই। হ্যাপি ট্রাভেলিং।
আরো পড়ুনঃঃ
ভ্রমনে কিভাবে ফ্রিতে থাকা যায়
কেন আপনার বালিতে ভ্রমন করা উচিত?
সস্তায় ভ্রমন টিপস
আমাদের কাছে গল্প পাঠান
কিভাবে যাবেন
প্রথমেই বলে রাখি যে সিকিম ভ্রমনে যেতে চাইলে ৬-৭ জনের গ্রুপ করে যাওয়া ভালো। এতে অনেক সুবিধে পাওয়া
যায়।
যে পোর্ট দিয়েই যান আপনাকে শিলিগুড়ি হয়েই গ্যাংটক যেতে হবে। শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক ১১৫.৭ কিমি। যদি চ্যাংড়াবান্ধা/
বাংলাদেশ থেকে খুব সহজেই বাংলাবান্ধা বর্ডার থেকে শিলিগুরি যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে বাংলাবান্ধা বর্ডার পর্যন্ত হানিফ সহ আরো অনেক বাস যায়। তাছাড়া ঢাকার
কল্যানপুর থেকে প্রতিদিন বাস তেতুলিয়াও যায়। ভাড়া
৬৫০ টাকা। তেতুলিয়ার কথা বললাম কারন যদি আপনারা বাংলাবান্ধার গাড়ি কোনো কারনে মিস করেন তাহলে তেতুলিয়া গিয়ে সেখান থেকে অটোতে করে বাংলাবান্ধা বর্ডার পর্যন্ত যেতে পারবেন। বর্ডার ক্রস করে SNT থেকে সিকিম যাওয়ার পারমিশন নিয়ে নিবেন। এতে
অনেক টাইম সেভ হবে। কারন র্যাংপো চেকপোস্ট থেকে সিকিম ভ্রমনের পারমিশন নিতে অনেক টাইম লাগে। বর্ডার
ক্রস করে একটা অটোতে উঠে বললেই হবে SNT যাবেন। ভাড়া
পরবে ২৫০ রুপি। সেখান থেকে সিকিম যাওয়ার পারমিশন নিবেন। আপনার
পাসপোর্টের এক কপি ফটোকপি, ভিসার এক কপি ফটোকপি ও এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি লাগবে। (এখানে
বলে রাখা ভালো যে যখনই বিদেশে ঘুরতে যাবেন তখনই সাথে বেশ কয়েক কপি পাসপোর্টের
ফটোকপি, ভিসার ফটোকপি, ছবি ইত্যাদি রাখবেন)। তারপর সেখান থেকে গ্যাংটক যাওয়ার জন্য
শেয়ার জিপ অথবা বাসের টিকেট কাটতে পারেন। ভাড়া পরবে ১৫০ রুপি নন এসি বাস, ২৫০ রুপি
এসি বাস, ২৫০ রুপি শেয়ার জিপ ভাড়া পড়বে। তবে জিপ ভাড়া ২৫০ থেকে ৩০০ এর মাঝে উঠানামা
করে। জিপে যাওয়ার আরো একটা প্রবলেম হলো জিপ পুরোপুরি না ভরলে ওয়েট করা লাগবে। তাই জিপে
গেলে ভাগ্য খারাপ থাকলে অনেক্ষন ওয়েট করা লাগতে পারে। যাওয়ার সময় র্যাংপো চেকপোষ্টে
নেমে যাস্ট এন্ট্রি সিলটা নিয়ে নিবেন। গ্যাংটকে নেমে হোটেলে উঠে যাবেন। আর জিপে গেলে
আপনি আগেই কথা বলে নিবেন যে আপনি র্যাংপো চেকপোস্টে নামবেন এবং সেখানে ৩০ মিনিট লাগবে।
নইলে জিপ এর ড্রাইভার আপনাকে এক্সট্রা চার্জ করতে পারে। আর গ্যাংটক থেকে ফিরে আসার
সময় র্যাংপো চেকপোস্টে নেমে এক্সিট সিলটাও মনে করে নিয়ে নিবেন।
অন্যান্য পোস্টঃঃ
সাজেক ভ্রমন গাইড - কিভাবে যাবেন? কোথায় থাকবেন?
ইন্দোনেশিয়ার বালি ভ্রমনের সম্পূর্ণ ট্যুরপ্লান
অন্যান্য পোস্টঃঃ
সাজেক ভ্রমন গাইড - কিভাবে যাবেন? কোথায় থাকবেন?
ইন্দোনেশিয়ার বালি ভ্রমনের সম্পূর্ণ ট্যুরপ্লান
গ্যাংটকে থাকার যায়গা
আশা করি থাকার যায়গা নিয়ে কিছু বলার নেই। আপনি খুব সহজেই বুকিং.কম থেকে হোটেল বুক করে আসতে পারেন। তাছাড়া হোটেল বুক করে না এলেও সমস্যা নাই। কম দামে অনেক হোটেল আছে গ্যাংটকে। ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০০ টাকার রুম পর্যন্ত আছে। তবে গ্যাংটকে হোস্টেল খুব একটা নেই। হাতে গোনা কয়েকটা আছে। তাই গ্রুপ করে ঘুরতে এলে ভালো হয়। আর বেশি নিচের দিকে হোটেল নিবেন না। নিচের দিকের হোটেল গুলোতে ভাড়া কম হলেও যখন মূল সড়কের উপর উঠবেন তখন দম বেড়িয়ে যাবে।
গ্যাংটকে কি কি দেখবেন
ছাঙ্গু লেক (Tsomgo Lake)
![]() |
রোপওয়ে দিয়ে ওপরে উঠলে দেখা পাবেন এই দৃশ্যের |
আর লোকাল সাইট সিইং এর মধ্যে আছে
- রুমটেক মনাস্ট্রি (Rumtek Monastery)
- এম জি মার্গ (MG MARG)
- টিবেটোলজি
- চোর্তেন সৌধ
- ফ্লাওয়ার শো
- কটেজ ইন্ডাস্ট্রি
- নামনাং ভিউ পয়েন্ট
- তাশি ভিউ পয়েন্ট
- হনুমান টক
- গণেশ টক
- জুওলজিকাল গার্ডেন
- ইঞ্চে মনাস্ট্রি
- বনঝকরি ওয়াটারফলস
- রোপওয়ে
গ্যাংটকে লোকাল সাইট সিইং কিভাবে করবেন
ঠিক এই পার্টটায় এসে মার খেয়ে যায় সলো ট্রাভেলাররা। কারন গ্যাংটকে জিপ ভাড়া করে ঘুরতে হয়। ফলে দশের বোঝা (টাকা) একার ঘাড়ে পরে। গ্যাংটকে বাইক রেন্টাল ও বেশি নেই। কয়েকটা আছে কিন্তু তারা ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স চায়। তাই জিপ ছাড়া গতি নেই। আর জীপ ভাড়া করার জন্য এজেন্সী থেকে ভাড়া করাই আমার ভালো মনে হয়েছে। যেদিন গ্যাংটকে যাবেন তার পরের দিন লোকাল সাইট সিইং করে কাটিয়ে দিতে পারেন। তাতে শরীরে চাপ কম পরবে। তো জীপ বুকিং এর জন্য আপনারা সানফ্লাওয়ার এজেন্সী থেকে প্যাকেজ নিতে পারেন। ৩৫০০ রুপিতে আপনারা একটা লাক্সারি গাড়ি (৭ সিটের) ও লোকাল স্পটগুলো কভার করতে পারবেন। আমি নিচে এজেন্সীর মোবাইল নম্বর দিয়ে দিচ্ছি৷
Sunflower Travels: +9197333 11217
এখানকার ভিউ পয়েন্ট গুলো ৪ টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় তো চেষ্টা করবেন ৪ টার মধ্যে কভার করার জন্য। ওহ! বলতেই ভুলে গেছিলাম, গ্যাংটকে গেলে প্যারাগ্লাইডিং ও করতে পারেন। এজন্য আপনার খরচ পরবে ৩০০০ রুপি (৬-৮ মিনিট) বা ৬০০০ রুপি (২০-৩০ মিনিট)। এজন্য আপনি Fly sikkim adventure থেকে বুক করে নিতে পারেন।
fly sikkim adventure booking number: +9197350 17094
fly sikkim adventure office location: Fly Sikkim Adventure
এই দিন ঘুরা শেষ করে আপনি পরদিন নর্থ সিকিম চলে যেতে পারেন অথবা নর্থ সিকিম যাওয়ার ইচ্ছা না থাকলে ছাঙ্গু লেকে চলে যাবেন। ছাঙ্গু লেক যাওয়ার গাড়ি গ্যাংটক থেকেই পেয়ে যাবেন। ভাড়া পরবে ৪০০০ টাকা। ৭ সিটের গাড়ি। তবে আমি রিকমেন্ড করব নর্থ সিকিম যাওয়ার। কারন ঐদিকটাতে অনেক ঠান্ডা ফলে এক্সট্রিম ওয়েদার এর অভিজ্ঞতা নেওয়া যায় আর সাথে করে অনেক সুন্দর সুন্দর প্লেস কভার করা যায়। নর্থ সিকিমে মানুষ লাচুং যায় বেশীরভাগ।
লাচুং
![]() |
ইয়ামথাং ভ্যালী |
লাচুং গ্যাংটক থেকে ১৩৮ কিমি দূরে। অসম্ভব সুন্দর একটা যায়গা। চারিদিকে শুধু বরফ থাকে শীতকালে। আর অনেক ঝিরিপথ ও থাকে তাই এই রকম একটা প্লেস মিস করা উচিত না।
কিভাবে যাবেন
গ্যাংটক থেকে জীপ ভাড়া করে লাচুং পর্যন্ত যাওয়া যায়। ভাড়া পরে। নর্থ সিকিমে এজেন্সি ছাড়া যাওয়া সম্ভবই না তাই এজেন্সি থেকে ফুল প্যাকেজ নিয়ে যেতে হয়। তাদের কাছেই কাগজপত্র (পাসপোর্ট, ভিসা, ইনার লাইন পারমিট ইত্যাদির ফটোকপি) দিতে হবে। তারা পারমিশন নিয়ে রাখবে। একটা গাড়ির জন্য ১২-১৩০০০ টাকা খরচ পরবে ফুল প্যাকেজ।প্যাকেজ এ যা থাকবেঃ
- লাচুং যাওয়ার জন্য ৭ সিটের গাড়ি
- সেই দিনের লাঞ্চ
- যাওয়ার পথে বেশ কয়েকটা স্পট কভার করা
- হোটেল এ থাকা (৭ জনের জন্য ৩ রুম)
- সন্ধ্যার নাস্তা
- রাতের ডিনার
- পরদিন সকালের নাস্তা
- ইয়ামথাং ভ্যালীতে যাওয়া
- দুপুরের লাঞ্চ
- আসার পথে সাইট সিইং
তো নর্থ সিকিম ঘুরা শেষ করে আবার গ্যাংটকে আসবেন। সেইদিন হোটেলে থেকে পরদিন ছাঙ্গু লেক চলে যেতে পারেন।
পরদিন ছাঙ্গুলেক ঘুরা শেষ করে হোটেলে থেকে যাবেন। এবং এর পরদিন রওয়ানা হয়ে যেতে পারেন বর্ডারের উদ্দ্যেশে। তবে অনেকেই গ্যাংটক যাওয়া অথবা ফেরার সময় একসাথে দার্জিলিং ট্যুর ও দিয়ে থাকেন। কারন দার্জিলিং এর পাশ ঘেষেই যেতে হয় সেখানে। তাই প্রায় একই খরচে দার্জিলিং ও ঘুরা হয়ে যায়। তবে অন্য কোনো পোস্ট এ হয়তো দার্জিলিং নিয়ে লিখবো৷ আজ এতোটুকুই। হ্যাপি ট্রাভেলিং।
সিকিম ভ্রমনে আরো যা যা জানা জরুরি
- পাসপোর্ট, ভিসা, ও ইনার লাইন পারমিট এর কয়েক কপি ফটোকপি নিজের সাথে রাখুন।
- অনেকেই বর্ডারে মানি এক্সচেঞ্জ করে নেন না৷ বর্ডারেই মানি এক্সচেঞ্জ করে নিবেন। এতে রেট ভালো পাবেন।
- যথেষ্ট পরিমান শীতের কাপড় সাথে রাখবেন। নাহলে মাইনাস তাপমাত্রা সহ্য করতে পারবেন না।
- ট্রেকিং এ গেলে হোটেল থেকেই বুট ভাড়া করে নিবেন।
- এজেন্সি থেকে বুকিং দিলে সবকিছু বুঝে নিবেন। যেমন কয়বেলা খাবার দিবে। সাথে কি কি সুবিধা দিবে ইত্যাদি।
- শিলিগুড়ি থেকে ভুলেও প্যাকেজ কিনবেন না। কত বাংলাদেশী যে শিলিগুড়ি থেকে প্যাকেজ কিনে ধরা খাইসে তার হিসেব নাই।
- বাংলাদেশের সাজেকের মতো একা থাকলেও যে গ্রুপ পেয়ে যাবেন তা ভাববেন না। তাই নিজেই গ্রুপ করে নিবেন।সিকিম ট্যুরে ৭ জনের গ্রুপ সব থেকে বেষ্ট। তবে ৮-১০ গেলে অসুবিধায় পরবেন। জীপ গুলো ৭ জনের জন্য।
- কখনোই ওপেন প্লেসে সিগারেট টানবেন না৷ আর রাস্তা ঘাটে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না। ( এই লাইনটা মনে করবেন না যে আপনি ক্লাস ৩-৪ এর বইয়ের ফরম্যালিটিগুলো পরছেন। এটা বাংলাদেশ না। আপনি যদি কোনো ময়লা রাস্তাঘাটে ফেলেন তাহলে নিজেতো অপমানিত হবেনই, ফাইনও দিতে হবে আর সাথে নিজের দেশ কেও গালি শুনাবেন। তাই এসব কাজ করবেন না।)
আরো পড়ুনঃঃ
ভ্রমনে কিভাবে ফ্রিতে থাকা যায়
কেন আপনার বালিতে ভ্রমন করা উচিত?
সস্তায় ভ্রমন টিপস
আমাদের কাছে গল্প পাঠান
Comments
Post a Comment