ভারতীয় ট্যুরিস্ট ভিসা আবেদন কিভাবে করবেন।

ভারতের টুরিস্ট ভিসার আবেদন কিভাবে করবেন?

বর্তমানে আমাদের ভ্রমনের শীর্ষ তালিকায় রয়েছে ভারতের নাম। ভারতে যেতে হলে বাংলাদেশীদের আগে ভিসা করে নিতে হয়। ফলে গুগলে ইন্ডিয়ান ভিসা প্রোসেসিং নিয়ে সার্চের সংখ্যা বাড়তেই আছে। বর্তমানে বাংলাদেশের ১৫ টি যায়গায় ভারতের ভিসা এপ্লিকেশন জমা নেয়।

কুমিল্লা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সাতক্ষীরা, বগুরা, ঠাকুরগাঁও,  ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট,  চট্টগ্রাম, রংপুর, ময়মনসিংহ, বরিশাল, যশোর। 

এখন আপনি খুব সহজেই কিছু রুলস ফলো করে দালাল ছাড়াই এবং কোনো ঝামেলা ছাড়া ভিসা পেতে পারেন। কারন এখন ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টারে অনেকগুলো কাউন্টার রয়েছে। এবং কোনো ই টোকেন লাগে না। তাই শুধু কাগজপত্র নিয়ে গেলেই হয়। আগে থেকে কোনো এপয়েনমেন্ট লাগবে না। 

ভারতীয় ট্যুরিস্ট ভিসা পেতে যা যা কাগজ লাগবে।

  • পাসপোর্ট
  • এককপি ২*২ ইঞ্চি মাপের প্রিন্টেড ছবি ও সফট কপি। 
  • পূরনকৃত ফরম (প্রিন্টেড)
  • নিজের পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি
  • ইউটিলিটি কপি ( বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, বা টেলিফোন বিলের কপি)
  • নিজের পেশাগত প্রমাণপত্র। (NOC/G.O , ছাত্রদের জন্য আইডিকার্ডের ফটোকপি বা বেতন জমা দেওয়ার স্লিপ। ব্যাবসায়ীদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি লাগবে।)
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট অথবা ডলার এনডোর্সমেন্ট অথবা ইন্টারন্যাশনাল কার্ডের কপি
  • পাসপোর্টের ডাটা পেজের ফটোকপি
  • সর্বশেষ ইন্ডিয়ান ভিসার ফটোকপি(যদি থাকে)
  • আগের সকল পুরাতন পাসপোর্ট
অবশ্যই সকল কাগজপত্রের আসল কপি সাথে করে নিয়ে যাবেন। ওরা দেখতে চাইতে পারে। তখন না দেখাতে পারলে সমস্যা। তারা আবেদন জমা নাও নিতে পারে। আর কাগজ পত্র স্ট্যাপ্লার মারবেন না। ফাইলে করে নিয়ে যাবেন।

আবেদন পদ্ধতিঃ

প্রথমে নিচের এই লিংকে যাবেন
https://indianvisa-bangladesh.nic.in/visa/index.html
তারপর Online Visa Application এ ক্লিক করবেন। তারপর সেখানে আপনার তথ্য দিতে থাকুন।
এখান থেকে  একটা পূরন করা স্যাম্পল ফাইল দেখে নিতে পারেন। আপনি কি ভিসা চাচ্ছেন। কত মাসের জন্য চাচ্ছেন এবং পোর্ট সিলেকশন করুন। আপনি যে কোনো পোর্টের ভিসা দিয়েই বেনাপোল, এয়ার, এবং গেদে দিয়ে পাস হতে পারবেন। তাই আমার মতে আপনার বেনাপোল(হরিদাশপুর) বর্ডার সিলেক্ট না করাই ভালো। এতে আপনি অন্য যে কোনো পোর্টের ভিসা দিয়েই এই দিকে ঢুকতে পারবেন। বাট এই হরিদাশপুর পোর্ট সিলেক্ট করে তো আর ডাউকি দিয়ে সাওয়া সম্ভব নয়। 
ফরম পূরন করার দিন হতে মোট ৯ দিন এই ফরম ভ্যালিড থাকে। তার মানে ওই দিন বাদ দিলে আর ৮ দিনের মধ্যে ফরম জমা না দিলে আবেদন বাতিল হয়ে যাবে। 

প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি সংগ্রহঃ

১। পাসপোর্টঃ বিদেশ ভ্রমনের জন্য তো পাসপোর্ট লাগবেই। তাই পাসপোর্ট না থাকলে সবার আগে এটি করিয়ে নিন। তবে ভিসা আবেদনের আগে খেয়াল রাখবেন পাসপোর্টের মেয়াদ যেন কম পক্ষে ৬ মাস থাকে ও কমপক্ষে ২ টি পাতা খালি থাকে। 

২। ছবিঃ ছবিটি ৩ মাসের ভেতর তোলা হতে হবে এবং ছবির সফট কপি ও হার্ড কপি দুইটাই সাথে রাখবেন। সফট কপি আবেদনের সময় প্রয়োজন পড়বে। সফট কপি ও হার্ড কপি একই হতে হবে। 

৩। আবেদন পত্রঃ অনলাইনে আবেদন করা শেষ হলে আপনার ইমেইলে একটা আবেদনের পিডিএফ কপি যাবে। সেখান থেকে আপনার আবেদন পত্রটি প্রিন্ট করিয়ে নিন। এপিঠ ওপিঠ প্রিন্ট করাবেন না। ২টি পাতায় আলাদা ভাবে প্রিন্ট করাবেন। 

৪। পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধনের কপিঃ এই পরিচয় পত্র স্মার্টকার্ড অথবা পুরোনোটাও দিলে হবে। এখানে আসলে আপনি সত্যিই নাগরিক কি না তা দেখা হয়।

5।  ইউটিলিটি কপিঃ এই পর্যায়ে দেখা হয় আপনার স্থায়ী ঠিকানা সত্যি কি না। যেকোনো একটি বিলের পেইড কপি দিয়ে দিন। বিলের ঠিকানা হুবুহু আপনার আবেদন ফরমের সাথে মিল থাকতে হবে। তাই আবেদনপত্র  পূরণের সময় সেই ঠিকানা দেখে দেখে পূরণ করুন। বিলটি আপনার নামে না হলেও হবে। শুধু ঠিকানাটা আপনার থাকা লাগবে ।


৬। পেশাগত প্রমানপত্রঃ আপনি চাকুরিজিবি হলে আপনার NOC/GO এর ফটোকপি দিবেন। ব্যাবসায়ী হলে ট্রেডলাইসেন্স এর ফটোকপি। আর ছাত্র হলে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড এর ফটোকপি। ছাত্র হলে নিজের অভিবাবকের পেশার প্রমাণপত্র নিয়ে যাওয়া ভালো। আমি আমার বাবার ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই গিয়েছিলাম। তাই আমার আবেদন বাতিল হয়ে গিয়েছিল। তাই ১টা কাগজ বাড়তি নিয়ে যাওয়াই ভালো।

৭। ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ডলার এনডোর্সমেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল কার্ডঃ 

  • ব্যাংক স্টেটমেন্টঃ ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিয়ে ভিসার আবেদন করতে হলে ব্যাংকে কমপক্ষে ২০০০০ টাকা রেখে তারপর ব্যাংক স্টেটমেন্ট নিন। ব্যাংক স্টেটমেন্ট কমপক্ষে ৬ মাসের থাকতে হবে এবং রেগুলার ট্রানজেকশন থাকতে হবে। আমার মতে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিয়ে এপ্লাই না করাই ভালো। আমার পরিচিত একজনের ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমানে টাকা ছিলো। ৬ মাস পুরোনোও ছিলো। কিন্তু তার ট্রানজেকশন এর ধরন পছন্দ হয়নি বলে তার আবেদন বাতিল করে দিয়েছিলো। তবে একান্তই ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিয়ে আবেদন করতে হলে ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর আসল কপি নিয়ে যাবেন।
  • ডলার এন্ডোর্সমেন্টঃ সবথেকে ভালো হচ্ছে ডলার এন্ডোর্সমেন্ট করে নিয়ে যাওয়া। এজন্য কমপক্ষে ১৫০ ডলার যেকোনো ব্যাংক থেকে এনডোর্সমেন্ট করে নিয়ে যাবেন। ডলার সাথে করে নিয়ে যাবেন। কারণ ডলার দেখতে চাইতে পারে না দেখাতে পারলে ভিসা দিবেনা। আর ডলার নিয়ে যাওয়ার ভালো আরেকটা দিক হচ্ছে বর্ডারে ঝামেলা করে না। 
  • ইন্টারন্যাশনাল কার্ডঃ  ইন্টারন্যাশনাল কার্ড বলতে ট্রাভেল কার্ড, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডকে বুঝানো হয়েছে। আপনার যদি কোনো ব্যাংকের প্রি পেইড কার্ড থেকে থাকে অথবা ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড থেকে থাকে তাহলে সেই কার্ডের সামনে পেছনে ফটোকপি করে নিয়ে যাবেন৷ নিরাপত্তার জন্য কার্ডের কয়েকটি সংখ্যা মুছে দিতে পারেন। আবেদনের দিন কার্ডটিও সাথে করে নিয়ে যাবেন। 
৮। পাসপোর্টের ডাটা পেজের ফটোকপিঃঃ পাসপোর্ট এর  যে পাতায় নাম ঠিকানা লেখা থাকে সেই পাতার ফটোকপি।
৯। সর্বশেষ ইন্ডিয়ান ভিসার ফটোকপি যদি থাকে তা নিয়ে যাবেন।


ইন্ডিয়ান ভিসা ফি জমা দেওয়াঃ

ভিসা ফি জমা দেওয়া খুব সহজ কাজ। আপনি নিজে নিজেই তা জমা দিতে পারেন। ইন্ডিয়ান ভিসার জন্য ৮০০ টাকা ফি লাগবে। ভিসা আবেদনের জন্য এই লিংকে গিয়ে আপনার ওয়েব ফাইল নাম্বার দিয়ে আর বাকি তথ্য দিয়ে পেমেন্ট করতে পারবেন। বিকাশ, ডি বি বি এল, রকেট ইত্যাদি দিয়ে পেমেন্ট করা যায়। কিভাবে পেমেন্ট করবেন তা দেখতে এই লিংকে ক্লিক করুন।

  • আবেদন জমা নেওয়ার সময় সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত।
  • পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া হয় বিকাল ৩ টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত। 
  • আপনি আপনার পরিবারের সদস্যদের পাসপোর্টও জমা দিতে পারবেন। এজন্য আপনার পাসপোর্টের ফটোকপি সব আবেদন পত্রের সাথে জমা দিতে হবে।


পাসপোর্ট সংগ্রহ করাঃ 

আপনি ভিসা আবেদন জমা দেওয়ার সময় আপনাকে একটি রশিদ দেওয়া হবে। সেখানেই আপনার পাসপোর্ট ডেলিভারি দেওয়ার ডেট লিখা থাকবে। আপনি ওই তারিখে গিয়ে পাসপোর্ট নিয়ে আসবেন। তাছাড়াও পাসপোর্ট রেডি হলে আপনার ফোনে মেসেজ আসবে কালেক্ট করার জন্য। 

 কিছু টিপসঃ

১/ পাসপোর্ট এর মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হবে।
২/ পাসপোর্টে কমপক্ষে ২টি পাতা খালি থাকতে হবে।
৩/ আবেদন জমা দেওয়ার সময় আগের সব পুরোনো পাসপোর্ট নিয়ে যাবেন। 
৪/ অনলাইনে আবেদনের ১-২ দিনের মধ্যেই আবেদন কেন্দ্রে চলে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।
৫/ অবশ্যই নতুন ছবি দিয়ে আবেদন করবেন। ৩ মাসের বেশি পুরোনো হলে আবেদন বাতিল হয়ে যাবে।

আরো পড়ুনঃ
  শিলং চেরাপুঞ্জি ভ্রমন
  শিমলা মানালি ট্যুর প্লান

Comments