 |
দার্জিলিং রিসোর্ট |
সাজেকে প্রবেশ করে এক মিশ্র অনুভূতি হলো। সাজেকের সৌন্দর্য সত্যিই অসাধারন। আর সেই সাথে মিশে রইলো সারাটা পথের ক্লান্তি আর পথের কাঁদা। হোটেল দার্জিলিং রিসোর্ট এ আমাদের জন্য রুম বুক করা ছিলো। হোটেলে প্রবেশ করে আরেকবার অবাক হলাম। এত্তো সুন্দর কোনো রিসোর্ট হতে পারে! হোটেলে প্রবেশের সাথে সাথেই সাজেক সম্পূর্ণ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়লো। আর আমাদের অবাক হওয়ার পরিমান আরো বৃদ্ধি পেলো। লাল নীল রঙের কাঠের রিসোর্টটি ছিলো অসাধারন। বারান্দা থেকে মিজোরাম অংশের সম্পূর্ণটা দেখা যায়। মনে হয় মেঘের উপরে বসে বসে পাহাড় দেখছি। আর এই যে অনূভুতি তা কখনোই বলে বা লিখে প্রকাশ করা যায় না। যাই হোক আমরা যে যার রুমে চলে গেলাম। রুম গুলো ছিলো আরো সুন্দর। আসলে রুমের ভেতরের ডেকোরেশন সাধারন হলেও বিশাল একটি জানালা আর জানালার ওপর পাশের দৃশ্যগুলো প্রথম দর্শনেই আপনার মনে গেথে যাবে। আমি এর আগেও ফ্যামিলি ট্রিপে পাহাড়ি অঞ্চল শিলং এ গিয়েছিলাম। বিশ্বাস করুন শিলং এর চাইতেও অনেক বেশী সুন্দর আমাদের এই সাজেক। হোটেলের বাথরুমে স্নান সেরে নিলাম। ফ্রেস হয়েই বের হলাম খাবারের জন্য। কারন সকাল ৭ টার সময় নাস্তা করে রওয়ানা হয়েছিলাম। তারপর আর খাওয়া হয়নি। এখন বাজে ৪ টা। কাজেই আগে থেকে ঠিক করা রেস্টুরেন্টে চলে এলাম। রেস্টুরেন্টের নাম কাশবন। সেখানে যেই ব্যাক্তি একবার ঢুকবে সে আর বের হতে পারবে না। এতই সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর৷ না, রেস্টুরেন্টের ডেকোরেশন এর কথা বলছি না। আবার ঐ জানালা কারসাজি এটা। আমাদের গ্রুপের এডমিন নাকি এখানে এর আগে ৪ বার এসেছেন।
 |
কাঁশবন |
কিন্তু এইবারের মতো আবহাওয়া আগে কোনো বারই পান নি। আর আসলেই সেই দিনের আবহাওয়া ছিলো দেখার মতো। মেঘলা মেঘলা একটা ভাব ছিলো। রেস্টুরেন্টে জানালার পাশে বসলাম। খোলা জানালা দিয়ে ঠান্ডা মেঘ এসে ঢুকছিলো। খাবারের মান মুটামুটি ভালোই। তো খাওয়া শেষ করে আসলাম রিসোর্টে। রুমে ঢুকে দেখি বড় ভাই সেই ঘুম দিচ্ছে। সাজেকে এসে এত্তো সুন্দর একটা বিকাল নষ্ট করে ঘুমানোর কোনো মানেই হয়না। তাই আবার বেড়িয়ে পড়লাম হেলিপ্যাডের উদ্দ্যেশে। রিসোর্ট থেকে বেড়িয়েই টাস্কি খেলাম। মেঘে পুরো সাজেক ঢেকে গেছে। মেঘ আসলে কুয়াশার মতোই দেখতে হলেও কিছুটা আলাদা। শরীরে কেউ পানি স্প্রে করে দিলে যেই রকম অনুভূতি হয় অনেকটা সেই রকম অনুভূতি। কিন্ত শরীর আবার ভিজেও যায় না। হাটতে হাটতে চলে গেলাম হেলিপ্যাডে। মাছবাজারেও এত্তো মানুষ হয় কি না সন্দেহ। এর মাঝে দিনটা ছিলো শুক্রবার। ফলে চারদিকে শুধু মানুষই শুধু দেখতে পেলাম। আমাদের দলের কয়েকজন শুরু করলো গীটার বাজিয়ে গান গাওয়া। দেখতে দেখতে আরো লোক এসে তাদের সাথে যোগ দিলো। এবং গান যখন পুরো জমে উঠেছে তখনই শুরু হলো বৃষ্টি। ঝুম বৃষ্টিতে কাক ভেজা হয়ে রিসোর্টে ফিরে এলাম। বৃষ্টি একটু কমতেই আবার সেই হেলিপ্যাডে সবাই জড়ো হয়ে আড্ডা চললো সন্ধ্যা নামার আগে পর্যন্ত।
 |
মেঘে ঢাকা সাজেক |

সন্ধ্যার সময় রিসোর্টে এসে বুঝতে পারলাম জ্বর চলে এসেছে। আর আগের দিনের সিলেট টু ঢাকা সারা দিনের জার্নি, ঢাকা টু খাগড়াচড়ি ও সেখান থেকে সাজেকের জার্নি সব মিলিয়ে খুবই ক্লান্ত লাগছিলো। আধা ঘন্টা রেস্ট নিয়েই আবার বেড়িয়ে পড়লাম। উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে পুরো সাজেক ঘুরে দেখা। রাতের সাজেকে হাটলে অন্য রকম একটা অনুভূতি কাজ করে। রাস্তার পাশের খাবারের দোকানগুলোতে বার্বিকিউ ও ব্যাম্বো মুরগি রান্না হচ্ছে। সবাই রাস্তায় নেমে আড্ডা দিচ্ছে। কিছু কাপড়ের দোকান ও খুলা আছে। দার্জিলিং রিসোর্ট থেকে ওপর মাথায় যেতে সময় লাগে প্রায় ১ ঘন্টার মতো। সেখান থেকে আবার চলে আসলাম কাশবনে। রাতের ম্যেনু হচ্ছে ব্যাম্বো চিকেন আর রুটি। বাশের মধ্যে মুরগী রান্না করে সেটার নাম দেওয়া হয়েছে ব্যাম্বো চিকেন। স্বাদটা সাধারন মুরগীর মাংসের মতোই তবে মাংসে কাচা বাঁশের একটা গন্ধ পাওয়া যায়। খাবারের থেকে বেশি আকর্শনীয় হচ্ছে খোলা জানালা দিয়ে ভেতরে মেঘ ঢুকছিলো। দেখলে মনে হবে স্মোকার মেশিন দিয়ে হাল্কা ধোঁয়া কেউ ভেতরে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। পেট ভরে খাওয়ার পর কাঁশবনের ছাদে চলে গেলাম। সেখান সবাই গোল হয়ে গান বাজনা চলছে। আয়েশ করে সেখানে বসার পর মনটা সত্যিই ভালো হয়ে গেলো। আর প্রচুর ঠান্ডাও লাগছিলো। সবমিলিয়ে এক অনন্য অনূভূতি। ১০ টার দিকে আড্ডা শেষ করে রিসোর্টে ফিরে এলাম। জানালা খুলে দিয়ে বিছানায় পড়তেই রাজ্যের ঘুম এসে চোখে ভর করলো। কতই বা আর সহ্য হবে! এর আগের দিন সিলেট টু ঢাকা, রাতে ঢাকা টু খাগড়াচড়ি ও সেখান থেকে সাজেকের রোলার কোস্টার মার্কা জার্নির সাথে সারাদিনের দৌঁড় ঝাপ। কাজেই রাতে আবার বের হওয়ার ইচ্ছে থাকলেও সেইদিনের ইতি বিছানায় পড়া মাত্রই হয়ে গেল।
 |
ঝকঝকে পরিষ্কার দিন মূহূর্তের মাঝেই মেঘে ঢেকে গেল |
Comments
Post a Comment