বিদায় সাজেক.....(সাজেক তিন)


ঘুম থেকে উঠলাম ভোর ৪ টার দিকে। উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে কংলাক পাহাড় থেকে সাজেকের বিখ্যাত মেঘ দেখা। রুম থেকে বেড়িয়ে দেখি সব ফাঁকা। অথচ গতকাল রাতেই সবাই ঠিক করেছিলো ৪ টার সময় উঠবে। তো কি আর করার! বিছানায় শুয়ে শুয়ে জানালায় রাতের সাজেক দেখছিলাম। ঘন্টা খানেক এভাবে পার হওয়ার পর আবার বাইরে থেকে একটা চক্কর দিয়ে এলাম৷ আমাদের গ্রুপের কাউকেই দেখতে পেলাম না। তাই রিসোর্টের বারান্দায় বসে বসেই ভোরবেলাটা কাটালাম। ৭ টার দিকে দেখলাম আমাদের গ্রুপের ২ জন বেড়িয়ে পড়েছেন। তো আমি ও তাদের সাথে রওয়ানা দিলাম৷ বয়সে তারা আমার অনেক বড়। টুকটাক কথা বলতে বলতে এগিয়ে চললাম কংলাক পাহাড় এর দিকে৷ তারা নাকি এডমিনের সাথে ফোনে কথা বলেছেন। এডমিন বলেছে তারা সবাই ৫ টার সময়ই কংলাকে রওয়ানা দিয়ে দিয়েছেন। তাই আমরাও সেই দিকে চলতে শুরু করলাম৷ অনেকটা পথ হাঁটতে হয় কংলাকে যাবার জন্য৷ আর আগের দিনের বৃষ্টিতে পথে কাঁদা জমার ফলে হাটতে অসুবিধা হচ্ছিলো। তাও অনেকটা পথ হেঁটে প্রায় কাছাকাছিই চলে গিয়েছি কংলাকের। কিন্তু পাশে থাকা দুই জনই বেঁকে বসলেন। উনারা আর যাবেন না। পাহাড়ে নাকি উনাদের অনেক অভিজ্ঞতা। পাহাড় নাকি শক্তি শুষে নেয়৷ উঠলে শুধু উঠারই ইচ্ছে হয়। পড়ে আর নামা যায় না। আরো কতো কিছু বলতে শুরু করলেন। এত্তো কাছে এসেও এই পাহাড়ে উঠবো না! কাজেই তাদের কাছ থেকে শিউর হয়ে নিলাম গ্রুপের বাকিরা সবাই উপরে আছেন কি না। তারপর সাহস করে এগিয়ে গেলাম। বিপত্তি হলো আরেক যায়গায়। কংলাক এর একেবারে শেষ পথটুকু খাড়া উপরের দিকে উঠে গেছে। বৃষ্টির কারনে পথ ও পিচ্ছিল। তাই সবাই ১০ টাকা দিয়ে লাঠি কিনে সেটা ব্যবহার করে উঠছে। কিন্তু আমার পকেটে টাকা নেই৷ রাতে শর্ট প্যান্ট পড়ে ঘুমিয়েছিলাম। সকালে বাইরে বেড়িয়ে দুই জনের সাথে দেখা হতেই তাদের সাথে কংলাকের দিকে রওয়ানা দিয়ে দিয়েছিলাম৷ কাজেই টাকা সাথে নেওয়ার সুযোগ পাইনি। কি আর করা! শুরু করলাম লাঠি ছাড়াই উঠা। কিছুদূর উঠতেই উপর থেকে নেমে আসা একজন আমাকে উনার লাঠিটা দিয়ে দিলেন। উপরে উঠার সময় সমস্যা না হলেও নামতে সমস্যা হবে। তাই উনার যেহেতু নামা শেষ এজন্য লাঠিটা আমাকে দিয়ে দিলেন। 


সত্যিই নামার সময় অসাধারন কাজে লেগেছিলো লাঠিটি৷ কংলাকে উঠেছিলাম মেঘ দেখবো বলে। কিন্তু সেদিন খুব রোদ উঠেছিলো। তাই মেঘ ছিলো না। সাজেকে আসার উদ্দ্যেশ্য ছিলো পাহাড়ের উপর মেঘের সমুদ্র দেখা। কিন্তু সেই সৌভাগ্য আর হয় নি। তবে যতটুকুই পেয়েছিলাম যথেষ্ট। আসার সময় আবার সেই আগের রেস্টুরেন্টে খেয়ে রওয়ানা হলাম। আর তখনই শুরু হলো বৃষ্টি। চাঁদের গাড়ির চারপাশ থাকে খুলামেলা। আর সেই দিক থেকে বৃষ্টির ঝাপটা এসে একেবারে ভিজিয়ে দেয়। কিন্তু এটাও সহ্য করে নেওয়া যেতো। সমস্যা দেখা দিলো অন্যযায়গায়। আগের দিন গাড়ির চাকা লিক হওয়ায় স্পেয়ার চাকা লাগানো হয়েছিলো। কিন্তু ঐ চাকার সাইজ আগেরটার থেকে মোটা ছিলো। কাজেই রাস্তার যতো কাদা ছিলো সব ভেতর দিকে ছিটকে এসে পড়তে শুরু করলো। আর ফোমের সীট গুলো পানিতে ভিজে একেবারে ফুলে ঢোল হয়ে গিয়েছিলো। কাজেই অগুলোতে আর বসা যায় না। বৃষ্টি না থাকলে ১০-১২ জন মানুষ এই গাড়িতে মুটামুটি ভালোই চলা যায়। কারন ৪-৫ জন শিউর ছাদে উঠবেই। কিন্তু বৃষ্টির সময় সেইটা সম্ভব না। কাজেই সবাই ভেতরে চলে এলো৷ এর মাঝে আবার সীটে বসা সম্ভব না। কাজেই ২ ফুট বাই ৫ ফুট যায়গার মাঝে ১০ জন মানুষ ছিলাম। এটাকে বসে থাকাও বলে না আবার দাঁড়িয়ে থাকাও বলে না। এবং সেই সময়ই আরো ২ জন আগন্তুক এসে আমাদের সাথে যোগ দিলেন। তাদের বাইকের ব্রেক ক্যাবল ছিড়ে গেছে। এই বৃষ্টির সময়ে শুধু সামনের ব্রেক নিয়ে পিলিয়ন সহ এগিয়ে যাওয়া খুবই রিস্ক। তাই পিলিয়ন দুই জন রাস্তার লিফট চাইতে শুরু করলেন। এই বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় দুইজনকে সাহায্য না করে চলে যাওয়ার মন মানসিকতা কারোরই নেই। তাই তারাও যোগ হলো আমাদের সাথে। সবমিলিয়ে দারুন একটা রাইড ছিলো সাজেক টু খাগড়াছড়ি। খাগড়াচড়িতে এসে আগে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। তারপর ঠিক হলো রিসাং ঝর্ণা বাতিল। কারন সময়ে কভার করা যাবে না। কাজেই প্রথমে চলে গেলাম আলুটিলা গুহায়৷ পাহাড়ের নিচ দিয়ে এই গুহা চলে গেছে। বের হয়েছে অপর পাশ দিয়ে। ভালোই একটা এডভেঞ্চার এই গুহা। কিন্তু এত্তো ভীর! ভীরের ঠেলায় কোথাও দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। সেখান থেকে বেড়িয়ে চলে গেলাম ঝুলন্ত ব্রিজে। বিকালের সময়টা কাটানোর জন্য ভালোই৷ সেখান থেকে সন্ধ্যার সময় বেড়িয়ে চলে এলাম বাসস্ট্যান্ডে। রাতের খাবার শেষ করে বাসে উঠে রওয়ানা দিলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে। সাজেক ট্যুরের ইতি সেখানেই।


Comments