গিলি আইল্যান্ডস
এই নামের সাথে পরিচিত? পরিচিত না হলে পরিচয় করিয়ে দেই৷
ইন্দোনেশিয়ার লম্বক দ্বীপের পাশে ক্ষুদ্র ৩ টি দ্বীপ অবস্থিত। এগুলোকে গিলি আইল্যান্ডস বলা হয়। অবশ্য ৩টি দ্বীপের আলাদা আলাদা নামও রয়েছে। যথাঃ গিলি ত্রায়াঙ্গান(Gili Trawangan), গিলি মেনো(Gili Meno), গিলি এয়ার(Gili Air)। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে গিলি ত্রায়াঙ্গান। এর আয়তন মাত্র ৬ বর্গ কিলোমিটার। গিলি মেনো এর থেকে একটু ছোট। আর গিলি এয়ার আরো একটু ছোট। তবে আয়তনে এই পিচ্চি দ্বীপগুলোই মধুর চাক এর মতো ট্যুরিস্টদের আকর্ষন করে। কেন? এর কোনো উত্তর নেই৷ কারনটা না হয় পরেই জানতে পারবেন।
গিলি ত্রায়াঙ্গান (Gili Trawangan)
৬ বর্গকিলোমিটার এর এই দ্বীপে একটা সাইকেল ভাড়া করে পুরো দ্বীপটা চক্কর দিতে বড়জোর ১ ঘন্টা লাগবে৷ যেইদিকেই চোখ যায় শুধু নীল জলরাশি। সেগুলো একেবারে দিগন্তরেখার কাছে গিয়ে আকাশের রঙের সাথে মিশে গেছে। এটা দেখার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। দ্বীপটা মুসলিম প্রধান। তবে মেইনল্যান্ড থেকে আসা অন্য ধর্মের মানুষও কিছু রয়েছেন। রাস্তাঘাট অতোটা সুবিধের না। অবশ্য কোনো মোটরযান ও নেই সেখানে। ট্রান্সপোর্ট হিসেবে রয়েছে শুধু ঘোড়ার গাড়ি আর সাইকেল। এই দ্বীপটা সলো ট্রাভেলার দের জন্য এক কথায় স্বর্গ রাজ্য। মূলত যারা একটু হৈ হট্টগোল পছন্দ করেন তাদের জন্যই এই দ্বীপ। থাকা-খাওয়া নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। অসংখ্য হোটেল ও রেস্টুরেন্ট আছে৷ আর রয়েছে বিভিন্ন বার ও পাব। সন্ধ্যের পর মিউজিকের তালে মেতে উঠে সারা দ্বীপবাসি। এক কথায় অপূর্ব। সারাক্ষন একটা পার্টি পার্টি ভাব। তাছাড়া jiggy boat party নামে ফেমাস বোট পার্টির জন্যও এই দ্বীপের খ্যাতি আছে।
গিলি মেনো (Gili Meno)
এই দ্বীপটা এক কথায় অসাধারণ। ত্রায়াঙ্গানের মতো এখানে কোনো হৈ হট্টগোল নেই। চারিদিকে ছায়া ঘেরা শান্তির এক পরিবেশ। এই দ্বীপ নিরিবিলি হওয়ায় কাপলরা এই দ্বীপ বেশী পছন্দ করেন। এখানে সলো ট্রাভেলার বেশী দেখা যায় না। তবে যারা নিতান্তই একা সময় কাটাতে চান তারা এখানে আসতে পারেন। একা অথবা সঙ্গীকে নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে পারেন সমুদ্রের পাড়ে৷ তবে এই দ্বীপে নাইটলাইফ নেই। সন্ধ্যের পর হাতে গোনা কয়েকটা রেস্টুরেন্ট খোলা থাকে। পূর্ণিমার রাতে বিচের মধ্যে বসে সময় কাটানোর সময় নিজেকে অনেকটা রবিনসন ক্রুসো এর মতো মনে হবে। এই দ্বীপের সবথেকে বিখ্যাত হচ্ছে Nest Sculpture। পানির মধ্যে বেশ কিছু মূর্তি গোল করে রেখে দিয়েছে৷ এখানে প্রায় সবাই স্নোরকেলিং করতে আসে।
গিলি এয়ার (Gili Air)
সবথেকে ক্লাসিক একটা দ্বীপ। এই দ্বীপে অন্য দুটো দ্বীপেরই সংমিশ্রণ ঘটেছে৷ এখানে মোটামুটি মানুষের আসা-যাওয়া আছে। তবে গিলি ত্রায়াঙ্গান এর মতো এতো ভীড় নেই। ফ্যামেলি নিয়ে আসলে এই দ্বীপটাই বেষ্ট৷ পুরো দ্বীপটা ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে ঘোড়া যায়৷ তাছাড়া সাইকেল তো আছেই৷ সন্ধ্যের পর ক্লাসিকাল স্টাইলে নাচ গান৷ সবকিছু মিলিয়ে অসাধারণ এই দ্বীপটি৷
গিলি আইল্যান্ডস এর একটা আকর্ষন আছে। কারন হচ্ছে কোনো ট্রাভেলারকেই এই দ্বীপগুলো হতাস করে না৷ আপনি খুব পার্টি মুডের মানুষ হয়ে থাকলে আপনার জন্য রয়েছে গিলি ত্রায়াঙ্গান। আবার সদ্য বিবাহিত কাপল অথবা একাকী থাকতে চাইলে আপনার জন্য আছে গিলি মেনো। আর পরিবার নিয়ে ঘুরতে চাইলে রয়েছে গিলি এয়ার। এখানে অতোটা উগ্রভাবে পার্টি হয়না। তবে তিনটা দ্বীপেই যেটা রয়েছে সেটা হচ্ছে অসাধারণ সৌন্দর্য। প্রকৃতি যেনো তার সব রূপ ঢেলে দিয়েছে এখানে। আপনি হাটু পানিতে দাড়িয়ে থাকলেও মাছ আপনার পায়ের কাছে ঘুরঘুর করবে। স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ পানিতে সাতার কাটতে পারবেন মনমতো। আর কি চাই? সমুদ্রপ্রেমীদের চাওয়া এর থেকে বেশী কিছু হয়না। তাই সমুদ্রপ্রেমীদের লিস্টে এই আইল্যান্ড এর নাম থাকেই।
কিভাবে যাবেন?
যদিও গিলি আইল্যান্ডস লম্বক দ্বীপের পাশে অবস্থিত। তবুও বেশীরভাগ ট্যুরিস্ট বালি ভ্রমন করতে এসে গিলি আইল্যান্ডে যায়। বাংলাদেশ থেকে এজন্য বালির ফ্লাইট ধরতে হবে। বালিতে ঘুরাঘুরি করার ইচ্ছা থাকলে সেটা শেষ করে তারপর সেখান থেকে ফাস্ট বোটের টিকিট কেটে চলে আসতে পারবেন গিলি আইল্যান্ডসে।
বালি ভ্রমন নিয়ে লেখা সম্পূর্ণ ট্যুরপ্লান পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
খরচঃ
বাংলাদেশ থেকে বালির রিটার্ন ফ্লাইট ৩০০০০ এর মতো। সেখান থেকে ফাস্ট বোটে করে গিলি আসতে খরচ হবে ২৪০০ থেকে ২৫০০ টাকার মতো (রিটার্ন)। আর গিলি আইল্যান্ড এ কতো দিন থাকবেন সেটার উপর নির্ভর করবে বাকি সবকিছু। ৫০০ টাকার ডর্ম থেকে শুরু করে ১৫০০০ টাকার হোটেল আছে সেখানে। খাবার খরচ পড়বে ১০০০ টাকা পার ডে (যদি খুব বেশী পেটুক না হোন আরকি)। আর বাদবাকী হাতখরচ আপনার উপর নির্ভর করে৷ তবে দিনপ্রতি ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা খরচ ধরে যতদিন থাকবেন ততদিনের হিসেব করতে পারেন।
Comments
Post a Comment