ফুকেট, থাইল্যান্ড

ফুকেট

থাইল্যান্ড এর সবচেয়ে জনপ্রিয় শহরগুলোর মধ্যে ফুকেট একটা। এটি ব্যাংকক থেকে প্রায় ৮৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পাতায়ার মতো এই শহরও সমুদ্র সৈকতের জন্য বিখ্যাত। বিশ্বের জনপ্রিয় সৈকতগুলোর অনেক গুলোই এই ফুকেটে অবস্থিত। তাছাড়াও বিচের পাশে রয়েছে অসংখ্য পোশাক, হস্তশিল্প, ম্যাসাজ পার্লার। ফলে এই বিচগুলো হয়ে উঠে পর্যটকদের মূল আকর্ষন। এখানেই শেষ নয়। আরো আছে বিভিন্ন ওয়াটার এক্টিভিটিস। তাই জীবনে একবার হলেও আপনার এই যাদুর শহর থেকে ঘুরে যাওয়া উচিৎ। 

কিভাবে যাবেন?

ব্যাংকক থেকে সরাসরি বাস, ট্রেন, ও প্লেনে করে ফুকেটে যাওয়া যায়। বাসে গেলে ৬০০ থেকে ৯০০ বাথ খরচ হয় শ্রেনী ভেদে। বাসে গেলে ব্যাংকক এর সাউদার্ন বাস স্টেশন থেকে যেতে হবে। ট্রেনে গেলে ২-৩ ঘন্টা সময় বেশি লাগে। কিন্তু ভাড়া প্রায় একই। আর প্লেনে গেলে খরচ পরে ৯০০ বাথ গড়ে। এর কমবেশিও হতে পারে। তবে প্লেনে গেলে শিওর হয়ে নিবেন যে লাকেজ বহন করা যাবে কিনা। 
আর বাংলাদেশ থেকে ব্যাংকক এর প্রতিদিন ফ্লাইট আছে। তাই আপনি সহজেই সেখানে যেতে পারবেন।

থাইল্যান্ড সম্পূর্ণ ট্যুর প্লান দেখতে এই লিংকে ক্লিক করুন। 

কোথায় থাকবেন?

ফুকেটে থাকার যায়গার অভাব নেই। ভাড়া অনেক রিজনেবল প্রাইজেই পাওয়া যায়। হোটেল  বুকিং.কম থেকে বুক করে যাওয়াই ভালো। কারন সেখানে অনলাইন আর অফলাইনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। ভাড়া সমান। তাই কষ্ট করে হেটে হেটে হোটেল না খুজে আগে থেকে বুক করে যাওয়াই ভালো। আর সলো ট্রাভেলার  দের জন্য হোস্টেল তো আছেই।

কি কি দেখবেন?

ফুকেটে দেখার যায়গার অভাব নেই। তাই ভালোভাবে ফুকেট ঘুরতে হলে কিছু সময় হাতে রাখা ভালো। মুটামুটি ৪-৫ দিন সময় হাতে নিয়ে ঘুরলে ফি ফি আইল্যান্ডে থাকা সহ পুরো ফুকেট ঘুরা যায় ভালোভাবে। তবে আপনার সুবিধামতো সময় কম বেশী ও করতে পারেন। ফুকেটে কি কি দেখার আছে তার একটা লিস্ট দিয়ে দিচ্ছি।

কারন বিচঃ ফুকেটের সবচেয়ে পপুলার বিচ হচ্ছে এই কারন বিচ। এখানে আছে বিভিন্ন ওয়াটার এক্টিভিটিস এর সুবিধা। তাই সমুদ্রের স্বচ্ছ নীল জলে খেলার ইচ্ছে থাকলে এই বিচ আসতে হবে মাস্ট।

বিগ বুদ্ধঃ বিগ বুদ্ধ বা গ্রেট বুদ্ধ হচ্ছে থাইল্যান্ডের অন্যতম একটা দর্শনীয় স্থান। এটা আসলে বুদ্ধদেবের একটা স্ট্যাচু যার উচ্চতা ৪৫ মিটার।

Phuket FantaSea: এটা আসলে একটা কালচারাল থিম পার্ক। এখানে থাইল্যান্ডের কালচারাল অনেক স্থাপত্য দেখতে পাবেন। ফ্যামেলি নিয়ে ভিজিট করার জন্য ভালো একটি জায়গা। এন্ট্রি ফি ৮০০ বাথ।

Wat Chalong: এটা একটা বুদ্ধিস্ট টেম্পল। বুদ্ধ মন্দিরে ঢোকার আগে অবশ্যই ভালো পোশাক পরে নিবেন। হাত পা ঢাকা না থাকলে মন্দিরে ঢুকতে পারবেন না।

কাটা নই বিচঃ এটা ফুকেটের দক্ষিন পশ্চিমে অবস্থিত একটা বিচ। কাটা বিচেরই একটা অংশ এটা।

কামালা বিচঃ যদি কোলাহল পছন্দ না হয় তাহলে এই বিচে আসতে পারেন। রিলাক্সড একটা বিচ।

কারন ভিউ পয়েন্টঃ এটা একটা মাস্ট ভিজিট প্লেস। কাটা নই, কাটা ইয়াই, কারন বিচ সহ আরো ৩টা বিচের দেখা পাওয়া যায় এইখান থেকে। এক কথায় অপূর্ব একটা যায়গা৷

Sirinat  National Park: এটা একটা ন্যাশনাল পার্ক।  কোলাহল ছাড়া থাকতে হলে এখানেও আসতে পারেন। বিরাট হাতির দেখা পাবেন এখানে। এন্ট্রি ফি ২০০ বাথ।

ফুকেট একুরিয়ামঃ এটাও একটা মাস্ট ভিসিট প্লেস। এখানে আপনি সার্ক সহ আরো অনেক প্রজাতির মাছের দেখা পাবেন। এন্ট্রি ফি ১৮০ বাথ। সকাল ১১ টার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। তখন মাছের খাবার দেওয়া হয়। তাই বেশি মাছ দেখা যায়। তবে বিকাল ৪ টার পর আর ঢোকা যায় না।

টাইগার কিংডমঃ বাঘ মামার সাথে সেলফি তুলে আপলোড দিতে চাইলে সেখানে যেতে পারেন। তবে খরচটা একটু নয়, পুরোটাই বেশি। ছোট বাঘের সাথে কুলাকুলি করতেই খরচ পরবে ৯০০ বাথ। আর বড় বাঘ হলে তো ৩৭০০ বাথ।

ফুকেট ৩ডি মিউজিয়ামঃ এটা একটা 3D মিউজিয়াম। 3D ছবি থাকবে। আপনি সেখানে গিয়ে ছবি তুলবেন। ফ্যামিলি নিয়ে ট্রাভেল করলে সেখানে যেতে পারেন। এন্ট্রি ফি ৪৫০ বাথ। অনলাইনেও টিকেট বুক করতে পারেন। অনলাইনে বুক করতে হলে ক্লিক করুন এখানে।

Patong beach: এটা আরেকটা বিচ। সানসেটের জন্য বিখ্যাত। একবার হলেও ঘুরে যাবেন।

The upside down house: এখানে ঢুকলে প্রকৃতি উল্টা না আপনি উল্টা সেটা বুঝতে পারবেন না। এন্ট্রি ফি ৩৫০ বাথ।

ডলফিন বেঃ একটা বড় সুইমিংপুলের মধ্যে ডলফিন থাকে। সেখানে সার্কাস সো করা হয়। মাস্ট ভিজিট প্লেস গুলোর আরেকটা। এন্ট্রি ফি ৫৫০ বাথ থেকে শুরু। অনলাইনে বুক করতে পারেন এখান থেকে।

ফি ফি আইল্যান্ডঃ ফুকেটে গিয়ে ফি ফি আইল্যান্ডে না গেলে আপনার ফুকেট ভ্রমন অসম্পূর্ণ। এটা অনেকটা আগ্রায় গিয়ে তাজমহল না দেখার মতো। তাই এটা মিস করা যাবে না। চেষ্টা করবেন ফি ফি আইল্যান্ডে গিয়ে ১-২ রাত থাকার। ফুকেট থেকেই ফি ফি আইল্যান্ড আর জেমস বন্ড আইল্যান্ডে যাওয়ার বোট প্যাকেজ পাওয়া যায়।


জেমস বন্ড আইল্যান্ডঃ হলিউড সিনেমার দৌলত্যে এই নাম। অনেক সুন্দর একটি দ্বীপ। তাই মিস করবেন না।


তাছাড়াও আরো অনেক মার্কেটও আছে দেখার মতো। তাই সময় করে যাবেন।

কিছু টিপসঃ

  • ফুকেটে আপনার সাইট সিইং এর পেছনে যথেষ্ট খরচ হবে। তাই বেশি টাকা পয়সা না থাকলেও টেনশন নিয়েন না। কারন বিভিন্ন পার্ক আর শো এর জন্যই আপনাকে পে করতে হবে। অথচ ফুকেটের প্রায় সব বিচেই ফ্রি এন্ট্রি। আর ফুকেটের বিচই সব।
  • আপনার চাঁদবদন চেহারার উপর মায়া থাকলে অবশ্যই অবশ্যই সানস্ক্রীন ক্রিম নিয়ে যাবেন। 
  • সারাবছরই ফুকেটে গরম থাকে। সেই মতো কাপড় নিয়ে যাবেন
  • বিভিন্ন রাইডের প্যাকেজ সবসময় দামাদামী করে কিনবেন।
  • যদি হুট করে ভ্রমনের প্লান করে ফেলেন তাহলে ব্যাংকক থেকে বাসে করে ফুকেট যাবেন। আর যদি অনেক আগে থেকে প্লান করা থাকে তাহলে বিমানের টিকেট আগে থেকেই কেটে রাখুন। এতে খরচ কম হবে। আর বিমানে গেলে অবশ্যই সাথে লাকেজ কম রাখবেন।
  • মানি এক্সচেঞ্জের সময় টাকা কাউন্টারে গুনে নিবেন।  
আরো পড়ুনঃ

Comments