বিদেশ ভ্রমনের নাম শুনলেই আমাদের মাথায় প্রথম যে দেশের নাম আসে তা হলো ভারত। কারন বাংলাদেশের কোনো যায়গায় ভ্রমনের থেকেও কম খরচে ঘুরে আসা যায় ভারতের ছোট কোন রাজ্য থেকে। কি বিশ্বাস হচ্ছে না? পাসপোর্ট আর ভিসা থাকলে মাত্র ৬ হাজার টাকায়ও ভারতের শিলং থেকে ঘুরে আসা যায়। তবে ভারতের প্রায় সব যায়গায় যেতে হয় শীতকালে। নাহলে গরমের প্যারা খেতে হয়। তাই বলে গরমের ছুটিতে ঘুরবেন না তা তো হয় না। তাই গরমের দিনে ঘোরার এক আদর্শ যায়গা হচ্ছে গোয়া। এটি ভারতের ছোট একটি রাজ্য। এখানে ছোট বড় অনেক বিচ রয়েছে। তাই কিছু টাকা ম্যানাজ করে নিন আর বেড়িয়ে যান সমুদ্রের রাজ্য।
কখন যাবেনঃ
নভেম্বর থেকে শুরু করে ফেভ্রুয়ারী পর্যন্ত গোয়াতে চলে পিক সিজন। এই সময় গোয়াতে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন। সবকিছুর দাম থাকে বাড়তি। আর জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকে অফ সিজন। এই সময়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। অন্যসব বাজেট ট্রাভেলে আমি অফ সিজন রিকমেন্ড করলেও এই গোয়াতে অফ সিজন রিকমেন্ড করব না। কারন ভ্রমন ২ কারণে হয়। একঃ প্রকৃতি দেখার উদ্দ্যেশে। আর দুইঃ আমোদ করার উদ্দ্যেশে। গোয়াতে মানুষ দ্বিতীয় কারণটির জন্যই যায়। তাই অফ সিজনে গেলে আপনি প্রায় সব ক্লাব, বার বন্ধ পাবেন। প্রায় সব এক্টিভিটিস বন্ধ পাবেন। সমুদ্রেরও তেমন ভালো ভিউ পাবেন না। সব মেঘে ঢাকা থাকে। তাই চেষ্টা করবেন মার্চ এপ্রিল মাসে যেতে।
কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে প্রতিদিন হানিফ, শ্যামলী সহ আরো অনেক বাস বেনাপোল পর্যন্ত যায়। অনেক বাস আবার কলকাতা পর্যন্ত যায়। আবার ট্রেনেও কলকাতা যাওয়া যায়। তাই যেকোনো উপায়ে কলকাতা চলে যান। বেনাপোল পর্যন্ত গেলে বর্ডার ক্রস করে যেকোনো অটো রিকসা করে বনগাও রেলস্টেশনে চলে যান। সেখান থেকে লোকাল ট্রেন শিয়ালদাহ পর্যন্ত যায়। আপনি যদি আগেই দেশ থেকে ট্রেনের টিকিট কেটে রাখেন তাহলে সেই দিনই ট্রেনে উঠতে পারবেন। আর না হলে সেই দিন কলকাতা থেকে পরদিন ফেয়ারলি প্লেস থেকে টিকিট যদি পাওয়া যায় তাহলে যাবেন। এইটা অনেক রিস্ক হয়ে যায় তাই চেষ্টা করবেন দেশ থেকে ট্রেন টিকিট কেটে যেতে। ট্রেনের টিকিট এর দাম ৮০০ রুপির মতো। সেই অনুপাতে এজেন্সিকে টাকা দিবেন। আর ক্রেডিট কার্ড থাকলে নিজে নিজেই টিকিট কাটবেন। আর ট্রেনে গেলে সম্ভব হলে বাম দিকে সিট নিবেন। এতে দুধসাগর ফলস এর বেষ্ট ভিউ পাবেন। আর প্লেনে গেলে ১।৫ মাস আগে টিকিট কাটলে ১২-১৩০০০ টাকার মতো খরচ পরবে রিটার্ন টিকিট সহ।
কোথায় থাকবেনঃ
গোয়াতে থাকার জন্য আছে অসংখ হোটেল-মোটেল, ভিলা, ডর্ম। তাই যদি ২ বা ততোধিক মানুষ থাকেন তাহলে হোটেল বুক করে যেতে পারেন। আর একা থাকলে ডর্মে বা হোস্টেলে থাকবেন। এতে আপনার টাকাও অনেক সেভ হবে আর নতুন মানুষের সাথে মিশতেও পারবেন। হোস্টেলে থাকার খরচ প্রতিরাতে ৩০০-৪০০ টাকার মতো পরবে এসি রুমে। তাই বুঝতেই পারছেন এর উপকারীতা। হোটেল বুক করার বেষ্ট ওয়েবসাইট Booking.com । এখানে বুক করলে আগে টাকা দিতে হবে না। হোটেলে গিয়ে তারপর টাকা দিবেন।
কোন যায়গায় থাকবেনঃ
গোয়া দুই ভাগে বিভক্ত। সাউথ গোয়া আর নর্থ গোয়া। সাউথ গোয়া হচ্ছে শান্ত প্লেস। এখানে তেমন ভীড় পাবেন না। ফ্যামেলি এর সাথে থাকলে সাউথ গোয়া বেষ্ট। এতে কোলাহল কম পাবেন। আর নর্থ গোয়া হচ্ছে পার্টি প্লেস। এখানে বিদেশী থাকে প্রচুর। সারা রাত পার্টি হয়। তাই মজা করতে হলে নর্থ গোয়াতে যাবেন। নর্থ গোয়াতেও বিভিন্ন প্লেস রয়েছে। যেমনঃ বাগা বিচ, আরম্বল বিচ, ক্যালাংগুট বিচ। চেষ্টা করবেন বাগা বিচ এড়িয়াতে থাকার।
খাওয়া দাওয়াঃ
গোয়াতে খাওয়ার জন্যো রেস্টুরেন্টের অভাব নেই। তবে সাধারন খাবারের জন্য লোকাল দোকানে যাবেন। ১৫০-২০০ টাকার মধ্যেই প্রতিবেলা খাওয়া সারা যাবে। তবে সিফুড এর জন্য খরচ করতে হবে একটু বেশী। তাই খাওয়ার ব্যাপারটা যার যার নিজের উপর। কারো ২০০টাকায় খাবার হয় আর কারো ১০০০ টাকায়ও পেট ভরে না।
লোকাল ট্রান্সপোর্টঃ
গোয়াতে লোকাল ট্রান্সপোর্ট এর জন্য ৩ টি উপায় রয়েছে।
১। সেলফ ড্রাইভিং ভেহিকেল। ( কার, বাইক, স্কুটি, সাইকেল )
২। টেক্সি , অটো রিসার্ভ
৩। বাস
বাসটা আমার কাছে একটু ঝামেলার মনে হয়েছে। কারণ নতুন যায়গায় বাস শিডিউল আগে যানতে হবে। এটা অনেক ঝামেলার। আবার টেক্সি বা অটো রিসার্ভ করলে টাকা জলের মতো বেরিয়ে যাবে। তাই ১ম অপশনটাই আমার কাছে বেস্ট মনে হয়েছে। ৩০০ টাকা দিলে সারা দিনের জন্য স্কুটি পাওয়া যায়, ১০০০ টাকা দিলে সারা দিনের জন্য কার পাওয়া যাবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াও স্কুটি চালানো যায় তবে ট্রাফিক পুলিশের গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবে না। তবে এতো ঝামেলাও করে না। আর চেষ্টা করবেন হলুদ নাম্বারপ্লেট এর ভেহিকেল নিতে। এতে ট্রাফিক পুলিশের ঝামেলা হতে বাচবেন। আর যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকে তাহলে ৭৫০ রুপি দিয়েই রয়াল এনফিল্ড পেয়ে যাবেন। আর হার্লে ডেভিডসন এর জন্য খরচ হবে ২০০০ টাকার মতো।
কতদিন থাকবেনঃ
কিছু কিছু সুপারম্যান আছেন যারা ৪০+ ঘন্টার ট্রেন জার্নি করে যেদিন গোয়াতে যায় তার পরের দিন থেকে ৩য় দিন চলে আসেন। এর ভেতরেই তাদের পুরো গোয়া এক্সপ্লোরেশন হয়ে যায়। তবে মিনিমাম ৪ রাত থাকার চেষ্টা করবেন। আর সময় থাকলে ৭ দিন। তবে বেশীরভাগই ৪ দিনের প্লান করে থাকে। তাই হাতে সময় রেখে ট্যুরে বের হবেন। কারন এতো কষ্ট করে গিয়ে পরে ফেরার সময় আফসোস করার কোনো মানে হয় না।
ট্যুর প্লানঃঃ
অমরাবতী এক্সপ্রেসে গোয়াতে যেতে ৪০+ ঘন্টা লাগে। যেই সন্ধায় ট্রেনে কলকাতা থেকে উঠবেন তার পরের দিন সারা দিন ট্রেনে থেকে তারও পরের দিন দুপুরের দিকে গোয়া পৌছাবেন। সেই দিন হোটেলে চেক ইন করে নিজের মতো করে কাটাতে পারেন। সম্ভব হলে রেস্ট নিন। এতে পরের দিনের জন্য এনার্জি পাবেন৷ ২য় দিনে সাউথ গোয়া এক্সপ্লোরেশন এ যেতে পারেন। বিভিন্ন ট্যুরিস্ট বাস পাওয়া যায় সারা দিনের প্যাকেজ এ। খরচ ও ৫০০ টাকার মধ্যে। তাই এই দিন শুধু সাউথ গোয়া এক্সপ্লোর করুন। ৩য় দিনে নর্থ গোয়া এক্সপ্লোর করুন৷ একটা লাইটহাউজ আছে। সেখানে যেতে পারেন। একটা আইস পার্ক ও আছে। সেখানে সবসময় তাপমাত্রা -৫ থাকে। এটা ঘুরে দেখতে পারেন। বাকি সময়গুলো বিচে কাটিয়ে দিবেন। তবে দুপুরের খাবারের পর ভালো একটা ঘুম দিয়ে দিবেন। এতে সারা রাত জেগে থাকতে পারবেন। কারন গোয়া রাতের বেলা আরেকরকম। সারা রাত এখানে পার্টি চলে। Titos সেখানকার নামকরা পার্টি প্লেস। সেখানকার একটা টিকিট কিনে বিচের পাশে মেতে উঠোন নাচে গানে। টিটোস এ প্রতি টিকিট এর সাথে রয়েছে ফ্রি আনলিমিটেড ড্রিংকস৷ অভ্যেস থাকলে হার্ড ড্রিংকস এর চান্স মিস দিবেন না৷ আর অভ্যেস না থাকলে সফট ড্রিংকস বা বিয়ার নিয়ে নিন। সারা রাতের পার্টি শেষে দেখবেন পুরোনো সব ক্লান্তি শেষ হয়ে আগামী ১-২ মাস মন ভালো থাকার ঔষধ পেয়ে যাবেন। ৪র্থ দিন হাতে রাখুন এক্টিভিটিস এর জন। এই ক্ষেত্রে আমার সবচেয়ে ভালো লাগে makemytrip app টি। এখানে বিভিন্ন প্যাকেজ পাওয়া যায় যা খুবই সাশ্রয়ী। যেমনঃ একটি প্যাকেজ দেখেছিলাম ২০০০ রুপির যার মধ্যে রয়েছেঃ হোটেল ট্রান্সপোর্ট, স্কুভা ডাইভিং, প্যারাসেলিং, ব্যানানা রাইড, বাম্পার রাইড, জেট স্কি, বোট রাইডিং, বুফে লাঞ্চ, আন্ডারওয়াটার ফটোগ্রাফি । এইগুলো আলাদা আলাদা করলে ৩০০০ রুপির বেশি খরচ হতো। তাই সব কিছু বুঝে শুনে তারপর সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন। রাতে প্যাকিং শেষ করে ঘুম দিয়ে দিন। পরদিন হাল্কা শপিং করে ট্রেনে উঠে পরুন৷
এভাবে খুব কম খরচে ঘুরে আসা যায় গোয়া। এমনকি এই প্লান মাফিক চললেও ১৫০০০ টাকায় ঘুরে আসা সম্ভব গোয়া থেকে৷
Comments
Post a Comment