কক্সবাজার সেন্টমার্টিন ট্যুর প্লান

   
             
কক্সবাজার বাংলাদেশের পর্যটনকেন্দ্র গুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি বিশ্বের সবচাইতে বড় সি বিচ। তাই প্রতি বছরই কক্সবাজারে টুরিস্ট এর সংখ্যা বাড়ছে। এরই সাথে তাল মিলিয়ে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন কক্সবাজার থেকে। তবে পরামর্শ রইল শুধু কক্সবাজার না ঘুরে একই সাথে বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ও ঘুরে আসার। আমি সিলেট থেকে গিয়েছিলাম এবং কক্সবাজারে ২ রাত এবং সেন্ট মার্টিনে ১ রাত থেকেছি।আমার ট্যুর প্লান সম্পর্কে এখানে তুলে ধরছি৷

সিলেট থেকে রাত ৯ টায় উদয়ন এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম এর উদ্দ্যেশ্যে যায় যার ভাড়া ৪০০ টাকার মতো। আমি বাজেট ট্রাভেলার হিসেবে ট্রেনেই ভ্রমন করি। এতে খরচ কম হয়। তো পরদিন ভোরেই চট্টগ্রাম পৌঁছে যাই। সেখানে স্টেশন এর পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে পেট ঠান্ডা করি। তারপর সেখান থেকে শ্যামলি কাউন্টারে চলে যাই৷ আমাদের বাস ১০ টায় ছাড়ে। ১ টার দিকে পৌছে যাই কক্সবাজার। বাস থেকে নেমেই রিক্সা নিয়ে জিয়া গেস্ট হাউজে চলে যাই৷ আমি আগেই বুকিং দিয়ে রেখেছিলাম। হোটেলে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে প্লান অনুযায়ী রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড দেখতে বের হই। কক্সবাজারে অটোরিকশা ভাড়া অনেক৷ তাই চেষ্টা করবেন স্কুটি ভাড়া নিতে। Cox's Bike লিখে ম্যাপে সার্চ দিলেই তাদের ঠিকানা পাবেন। ৫ ঘন্টার জন্য ভাড়া নেয় ৬০০ টাকা। ফলে ২ জন ট্রাভেলার হলে খরচটাও ভাগ হয়ে যাবে। ১০০ টাকার ফুয়েল নিলে সারা দিন অনায়াসেই চালিয়ে দেওয়া যায়। তো সারাদিন বাইক নিয়ে ঘুরে ফিরে সন্ধ্যায় চলে আসি বিচে। বিচে একা গেলেও সমস্যা নাই। সারা সন্ধ্যা অন্য কোনো গ্রুপের সাথে আড্ডা দিয়ে অনায়াসেই কাটিয়ে দেওয়া যায়৷ রাত ১১ টার দিকে অবশেষে হোটেলে যাই। রাস্তায় যেতে যেতেই ফুডপান্ডায় খাবার অর্ডার দিয়ে দিই। ফলে হোটেলে যাওয়ার ৫ মিনিটের মধ্যেই খাবার চলে আসে৷ তাড়াতাড়ি খেয়ে রাতে একটা সেই রকম ঘুম দেই। পরদিন সকালের নাস্তা সেরে আবার স্কুটি ভাড়া করি। সারা দিন পুরো কক্সবাজার ঘুরে দুপুরের খাবার খেয়ে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে যাত্রা শুরু করি। হিমছড়ি এসে ঝর্ণার পানিতে হাতমুখ ধুয়ে আবার ইনানি বিচের উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা শুরু করি৷ আমার কাছে বেস্ট মনে হয়েছে ইনানি সি বিচ। এখানে পুরো বিকেলটা কাটিয়ে দিই। তারপর আবার রওয়ানা হয়ে কক্সবাজারে ফেরত আসি। সন্ধাটা বিচে কাটিয়ে ১০ টার দিকেই হোটেলে চলে যাই। হোটেলে হোটেলে একটা গ্রুপ পরদিন সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া করে৷ তাদের ২ টা সিট খালি ছিল। তাই আমি ও তাদের সাথে যোগ দেই। পরদিন খুব ভোরেই আমরা টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। টেকনাফ থেকে ৯ টার সময় জাহাজ ছাড়ে। কিন্তু আমাদের পৌঁছাতে অনেক দেরী হয়ে যায়। যাইহোক সেখানে পৌঁছে নাস্তা করে ট্রলারে উঠি। ২০০ টাকা ট্রলার ভাড়া। ট্রলারে যাত্রা করলে অবশ্যই ছাতা বা টুপি সাথে রাখবেন। ট্রলারে ঢেউ এর সাথে দুলে দুলে যাত্রার মজাই আলাদা। সেন্টমার্টিন পৌঁছাতে ২ ঘন্টা ৩০ মিনিটের মতো সময় নেয়৷ দ্বীপে পৌঁছেই আগে খাওয়াদাওয়ায় মন দেই। হোটেল আমরা ৩ টার পরে বের হই খুজতে। এতে অনেক কমদামে হোটেল পাওয়া যায়৷ যদিও এইটা শোনা কথা তবে বাস্তবে আমাদের ক্ষেত্রে এই টিপসটা তেমন কাজে দেয় নি। ৭০০ টাকা দিয়ে এক রাতের জন্য রুম ভাড়া নেই। ৪ জন এক রুমে ছিলাম আমরা। বিকালের সুর্যাস্ত দেখার জন্য পশ্চিমের বিচে চলে যাই। সেখান থেকে হোটেলে ফিরে বারবিকিউ পার্টির আয়োজন করি। তারই মধ্যে গ্রুপের আরেকজন এক ডজন বিয়ার ক্যান নিয়ে আসে৷ তারপর আর কি! সমুদ্রের পাড়ে আগুন জ্বালিয়ে একসাথে বসে খাওয়াদাওয়া আর আড্ডা।

এর থেকে মজার আর কিছুই হয় না৷ এভাবেই কাটিয়ে দিলাম সেই দিনটি। পরদিন ভোরে উঠে রওয়ানা হলাম ছেঁড়া দ্বীপ এর উদ্দ্যেশ্যে। সেন্ট মার্টিন আসলে এখান থেকে ঘুড়ে যেতেই হবে। সেই দিনই আমরা দুপুরের জাহাজে টেকনাফ চলে আসি৷ টেকনাফ থেকে আবার কক্সবাজার এসে বিদায় নেই সেই গ্রুপের থেকে৷ অসম্ভব ভালো ছিল তারা প্রত্যেকে। কক্সবাজার থেকেই সরাসরি বাস যায় সিলেট পর্যন্ত। তো বাসের টিকেট কিনে উঠে পড়ি বাসে। এভাবেই একটি অসম্ভব ভালো ট্যুরের সমাপ্তি ঘটে।

সলো ট্যুরে অবশ্যই চেষ্টা করবেন ভালো কোনো গ্রুপে জয়েন করতে। এতে একদিকে খরচ কমে। আবার অন্যদের সাথে মেলামেশা করার সুযোগ পাবেন। আমার পুরো ট্যুরে প্রায় ৬৫০০ টাকার মতো খরচ হয়েছে। ২ জন গেলে হয়তো ৫৫০০ এর মতো খরচ পড়তো। তাই যদি সঙ্গি না থাকে তাহলে নিজেই বেড়িয়ে পড়তে পারেন।   

Comments