আমার সম্পর্কে

প্রতিটি মানুষ ২৩ জোড়া ক্রোমোজম নিয়ে জন্মগ্রহন করে। এই ২৩ জোড়ার প্রতিটাই আসে বাবা মায়ের কাছ থেকে। কাজেই প্রতিটি মানুষের ভেতর তার বাবা মায়ের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। সেই থেকেই আন্দাজ করি আমার ঘুরাঘুরির নেশাটা বোধহয় বাবার মায়ের কাছ থেকেই এসেছে। হয়তো বেশী দূর যাওয়ার সাধ্য ছিলো না। তাই পাশের দেশ ভারতেই ভ্রমন করেছেন ২১ বার। প্রতিবারে ছিলো নানান স্মৃতি। মা ওতো বেশী ঘুরাঘুরি করতে পারেননি। কিন্ত উনার সাথে থেকে বুঝেছি শুধু সংসার নামক দড়ি দিয়ে বাধা না থাকলে তিনিও উড়াল দিতেন। সেই বাবামায়ের ছেলে হয়ে ঘর কুনো হয়ে থাকা মানায় না। প্রথম দিকে নিজের এই নেশার কথা বুঝতে পারতাম না। কিন্ত যখনই মন খারাপ হয় তখন দেখতাম একটু হাটাহাটি করলেই মন ভালো হয়ে যেত। আর এডভেঞ্চারের একটা সুপ্ত নেশা তো আছেই। হাটাহাটির সাথে মন ভালো হওয়ার একটা সম্পর্ক আছে। যদিও আইডিয়াটা সম্পূর্ণ আমার নিজের। তবুও বলি, আমি যখনই বাসা থেকে হাটতে বের হই আমি নিজের কল্পনায় পরিচিত শহরটাকে অপরিচিত ভাবে কল্পনা করি। অনেক বেশি কল্পনা শক্তি থাকায় এই কাজে মুটেই আমার বেগ পেতে হয় না। ব্যাস, তাহলেই মনে হয় নতুন কোনো এক শহরে হাটছি। মন তখনই ভালো হয়ে যায়। তারপরও বাসা থেকে ছোটবেলা বাবার সাথে ভারতে ঘুরেছি বেশ কয়েকটা রাজ্য। নতুন নতুন অভিজ্ঞতা পেয়েছি। তারপর দেশের ভেতরই আশেপাশে এক দিনের ট্যুরে গিয়েছি। কিন্ত কিছু একটা তখনো যেন বাকী রয়ে গেছিলো। আস্তে আস্তে বুঝতে পারি এই কিছু একটা হচ্ছে স্বাধীনতা। যতো বারই কোথাও গিয়েছি অন্য কারো সাথে গিয়েছি। নিজের মনের মতো উপভোগ করতে পারতাম না। আসলে বয়সটা এমন ছিলো যে তখন একা যাওয়ার চিন্তা করাটাও বোকামী। ক্লাস টেনে পড়া এক ছেলে তো আর একা একা ঘুরতে যেতে পারে না! যাই হোক এস এস সি শেষ করলাম। এইচ এস সি তে এসে আরো বেশি ঘুরাঘুরির ভূত চাপলো। যদিও একা ঘুরার স্বাধীনতা সবেমাত্র আসতে শুরু করেছিলো কিন্ত বাধা হয়ে দাড়ালো করোনা ভাইরাস। লকডাউনে সবকিছু বন্ধ। কাজেই কোথাও যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। ফলে মাসের পর মাস শুধু প্লান আর প্লান ই করতে থাকলাম কাজের কাজ কিছুই হলো না। কিন্ত আশা না ছেড়ে ব্যাংকের একাউন্টে টাকা জমাতে থাকলাম। আহামরি কোনো এমাউন্ট না। এই ৫০০ বা ১০০০ টাকা করে তাও প্রতি মাসে। মন যদিও পড়ে থাকতো হাজার কিলোমিটার দূরে কিন্ত এতো সহজে তো একা একা বাসা থেকে বের হওয়ার পারমিশন পাওয়া যায় না। তাই কিভাবে বাসায় আমার ইচ্ছের কথা জানানো ও আসায় করা যায় তা চিন্তা করতে শুরু করলাম এবং কিভাবে স্বাধীনতা আদায় করা যায় সেই রাস্তা পেয়েও গেলাম। প্রথম স্ট্রাটেজি হলো কোনো খানে ঘুরতে যাওয়ার প্লান করলে সম্পূর্ণ খরচটা নিজে বহন করতে হবে। বাসা থেকে ১ টাকাও নেওয়া যাবে না। এবং উঠতে বসতে বাসায় জানিয়ে দেওয়া যে আমার একমাত্র ভালো লাগা হচ্ছে ট্রাভেলিং। শুধু এই ২টা কৌশল খাটিয়েই আমি আমার প্রায় ৭০ ভাগ ফায়দা তুলে নেই। এখন আর বাসায় আমার ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনলে চোখ কপালে তুলেন না। তবে শুধু এতেই তো হবে না। প্রাক্টিকাল কিছু করতে হবে। তাই করোনা একটু কমতেই আর নিয়ম শীতল হতে না হতেই বেরিয়ে পড়লাম সাজেকের উদ্দ্যেশে। অজানা কোনো দূরের গন্তব্যে এটাই আমার প্রথম ভ্রমন। তাই একা একা তো আর ছাড়া যায় না। তাই আমি নিজের আমার এক বড় ভাইকে ট্রাভেলিং এর নেশায় ফুসলে দিয়ে তাকে সাথে নিয়ে চললাম। প্রথম ভ্রমন শেষ করলাম। এবার বাসার সবার মনকে আরেকটু শক্ত করার পালা। তাই ৬ মাস পরেই সাহস করে বললাম ফ্রেন্ডের সাথে যাবো কক্সবাজার। কয়েকদিনেই রাজি করিয়ে ফেললাম। প্রথমে ঘুরতে যেতে হতো বাবার সাথে, তারপর গেলাম বড় ভাইয়ের সাথে, এরপর ফ্রেন্ডের সাথে। তাই বুঝতে আর বাকি রইলো না যে কক্সবাজার ট্যুরের পরই একা একা বের হওয়া যাবে। অত্যন্ত কৌশলে আমি আমার স্বাধীনতা বের করে নিয়েছি। যদিও করোনার কারনে ভ্রমনে বের হতে পারছি না কিন্ত করোনা শেষ হলেই যে বের হয়ে যেতে পারবো অজানার উদ্দ্যেশ্যে সেই বিষয়ে এখন আর কোনো সন্দেহ নেই। যেহেতু ডায়রি লেখার আধুনিক সঙ্কলন হচ্ছে ব্লগ লেখা তাই নিজের অভিজ্ঞতাটুকু কোথাও লিখে যেতে পারবো এতেই শান্তি।